• রক্ত-সঙ্কটে ভুগছে সদর শহর তমলুক, ভোগান্তিতে রোগীর পরিবার
    এই সময় | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, তমলুক: সরকারি হাসপাতাল তো আছেই, জেলার সদর শহর হওয়ায় বেসরকারি নার্সিংহোমও কিছু কম নেই। সেই কারণে তমলুকে প্রতিদিনই লেগে থাকে রোগীদের আনাগোনা। দুর্ঘটনায় জখমদের চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারে তো বটেই, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসাতেও প্রয়োজন রক্তের। কিন্তু রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, রক্তের চরম সঙ্কট চলছে। চিকিৎসা করাতে এসে রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। তমলুক শহরের বুকে রয়েছে তাম্রলিপ্ত গর্ভনমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। নিমতলা থেকে মানিকতলা ও ধরিন্দা রাজ্য সড়কের পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ৭০-৮০টি নার্সিংহোম।

    তমলুক ব্লাড সেন্টারের হিসেব অনুযায়ী, দৈনিক গড়ে ১২০ ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে রক্ত না-আসায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেকটাই কমেছে। সোমবার সকালে ব্লাড সেন্টারে রক্তের জন্য এসেছিল ১৩ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর পরিবার। পর্যাপ্ত রক্ত মজুত না-থাকায় মাত্র সাত জন রোগীকে রক্ত দেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রায়ই এমনটা ঘটছে বলে অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের। কেন নেই রক্তের জোগান।

    একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, প্রায় কুড়ি দিন ধরে শহরে কোনও রক্তদান শিবির না-হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গ্রীষ্মকালে এমনিতেই রক্তদান শিবির কম হয়। হলেও গরমে রক্ত দিতে মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যায়। তাই রক্তের জোগান গ্রীষ্মকালে সাধারণত কম থাকে। কিন্তু শীতকালে এমন সঙ্কট এই প্রথম।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ছ'টি ব্লাড সেন্টার রয়েছে। তার মধ্যে তমলুক ব্লাড সেন্টারেই রক্তের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রতিদিন ৩-৪টি করে শিবির হয়। কিন্তু গত সাত দিনে মাত্র চারটি রক্তদান শিবির হয়েছে। কেন হচ্ছে না রক্তদান শিবির।

    স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রে খবর, সরকারি ভাবে রক্তদান শিবিরের জন্য প্রতি সংগঠনকে ৫০০ টাকা এবং প্রত্যেক রক্তদাতাকে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। স্থানীয় সংগঠনগুলির অভিযোগ, কলকাতার কিছু বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তদান শিবির আয়োজনের জন্য অনেক বেশি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় কলকাতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বহু সংগঠন। তার জেরে জেলার রক্ত বাইরে চলে যাচ্ছে। তমলুক ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শুকদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, 'আমরা দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যেই সঙ্কট কেটে যাবে।'

    তাম্রলিপ্ত গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল শর্মিলা মল্লিক বলেন, 'ক্যাম্প কম হচ্ছে কেন, খোঁজ নিচ্ছি। কেউ যদি বেসরকারি ভাবে অর্থ বা উপহার দিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি।'

    ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে দ্রুত রক্তদান শিবির আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। তমলুক ব্লাড সেন্টারের তরফেও সাধারণ মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। চিকিৎসক মহলের মতে, রক্ত মজুত না-থাকলে একদিকে যেমন থ্যালাসেমিয়া রোগীরা মারাত্মক সমস্যায় পড়বেন, অন্য দিকে জরুরি অস্ত্রোপচারও থমকে যেতে পারে। তাই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না-হলে জেলার স্বাস্থ্য-ব্যবস্থাও সঙ্কটে পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

  • Link to this news (এই সময়)