• ‘দাগি’ শিক্ষাকর্মী হঠাৎই দ্বিগুণ! নয়া অঙ্কে বিভ্রান্তি
    এই সময় | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ২০১৬–এর নিয়োগে ‘টেন্টেড’ বা ‘দাগি’ শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা ঠিক কত? ৩,৫১২ নাকি ৭,২৯৩!

    কলকাতা হাইকোর্টের সোমবারের শুনানির পরে এই সংখ্যা নিয়ে নতুন করে ধন্দ তৈরি হলো। বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে সোমবার শিক্ষাকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে গ্রুপ–সি ও গ্রুপ–ডি প্রার্থীদের একাংশের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, এসএসসি ২০১৬–এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৭,২৯৩ হাজার জন শিক্ষাকর্মীকে ‘টেন্টেড’ বা ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত করে সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য গত ৩ নভেম্বর ফর্মপূরণ শুরুর আগে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে কমিশন ‘দাগি’দের যে তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে, তাতে ৩,৫১২ জন প্রার্থীর নাম রয়েছে।

    এ দিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিক্ষাকর্মীদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট করে ‘দাগি’দের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এই ৭,২৯৩ প্রার্থীর বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে নতুন করে তালিকা জমা দিতে হবে এসএসসি-কে। থাকতে হবে ‘দাগি’দের রোল নম্বর, প্রাপ্ত নম্বর, বাবার নাম এবং ঠিকানা।

    আদালত জানিয়েছে, এই তালিকায় র‌্যাঙ্ক জাম্প, আউট–অফ–প্যানেল, ওএমআর কারচুপি–সহ যত ত্রুটি ধরা পড়েছে, সেই সব ‘দাগি’র নাম প্রকাশ করতে হবে। তবে ২০১৬–এর প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে সেখান থেকে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করে এসএসসিকে আগামী শুনানিতে হাইকোর্টে জমা দিতে হবে। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, ২০১৬–এর শিক্ষাকর্মী (সি–ডি) পোস্টে মোট ৫,৯১৭ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল।

    এ বিষয়ে এসএসসি ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চে এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসেও বারবার হলফনামা দিয়েছে। এতদিন পরে কলকাতা হাইকোর্ট কী করে ৭,২৯৩ জন দাগি শিক্ষাকর্মীর তালিকা প্রকাশ বা জমা দিতে বলছে, সেটাই বিস্ময়ের। তা হলে আদালতে রাজ্য এবং এসএসসি–র আইনজীবীরা সেই বিষয়ে সওয়াল করছেন না কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

    সুপ্রিম কোর্টে এসএসসির জমা দেওয়া একটি নথি দেখিয়ে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এ দিন হাইকোর্টে অভিযোগ করেন, ‘দাগি’ শিক্ষাকর্মীদের যে তালিকা তারা সুপ্রিম কোর্টে দিয়েছে, আর যে তালিকা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে বিস্তর ফাঁক রয়েছে। এরপরেই হাইকোর্ট নতুন করে ৭,২৯৩ জনের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়। আদালতের আরও বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছে, কোনও ভাবেই একজনও ‘টেন্টেড’ যেন এই পরীক্ষায় বসতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এসএসসি ইতিমধ্যে ৩,৫১২ জন ‘দাগি’র তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে হাইকোর্ট কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছে। এই মামলার নিষ্পত্তির উপরেই নির্ভর করবে গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া।

    এ দিকে, গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল বুধবার, ৩ ডিসেম্বর। হাইকোর্ট দুপুরে জানিয়েছিল, এ ব্যাপারে তারা হস্তক্ষেপ করবে না। যদিও কমিশনের সচিব বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, শিক্ষাকর্মী পদে আবেদনের দিন বাড়িয়ে এসএসসি ৮ ডিসেম্বর করেছে। মূলত, একাদশ ও দ্বাদশ এবং নবম–দশমে শিক্ষক নিয়োগের ফলপ্রকাশের দিনগুলোয় কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এই সময়–বৃদ্ধি।

    চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষাকর্মী অমিত মণ্ডল বলেন, ‘হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট যখ‍নই বলছে, এসএসসি দাগিদের তালিকা প্রকাশ করছে। এর আগেও কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে দফায় দফায় টেন্টেড–দের তালিকা প্রকাশ করেছে। তারপরেও আট মাস ধরে যোগ্য গ্রুপ সি–ডি কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। সে ব্যাপারে আদালতে রাজ্য সরকার, এসএসসি এবং বিরোধী আইনজীবীরা নীরব।’ ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক রাকেশ আলমের বক্তব্য, ‘আদালত শুধু দাগিদের তালিকা প্রকাশ করতে বলছে। তার মানে অন্য দল যোগ্য। কিন্তু তাঁদের তালিকা প্রকাশে একবারও আদালত কোনও নির্দেশই দিচ্ছে না।’

  • Link to this news (এই সময়)