বাংলায় এসআইআর শুরু হওয়ার অনেক আগে বিএলওদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, তিনি রয়েছেন। পরে প্রশাসনিক সভা থেকেও সে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক একই ভাবে এবার জেলা শাসক, মহকুমা শাসক ও বিডিওদের বরাভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার বাড়ি সহ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এদিন জেলা শাসক, মহকুমা শাসক ও বিডিওদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক ছিল মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের। সেই বৈঠকে হঠাৎই যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এসআইআর-এর জন্য আপনাদের যে চাপ যাচ্ছে, বুঝতে পারছি। তবে বাংলার বাড়ি, রাস্তা-সহ উন্নয়নের কাজও যাতে উপেক্ষিত না হয় সেটা দেখতে হবে।
সূত্রের খবর, এর পরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একজন এক্স অফিসারকে পাঠিয়েছে ওরা। ভয় দেখাচ্ছে, বিরক্ত করছে। রাত ৯টা বা ১০টায় ফোন করে ভয় দেখাচ্ছে। বলছে, দিল্লি পাঠিয়ে দেব, বদলি করে দেব। ভয় পাবেন না আমি আছি। কিচ্ছু ভাববেন না। আপনারা আপনাদের কাজ করে যান।এক্স অফিসার বলতে মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন আমলা সুব্রত গুপ্তর কথা বোঝাতে চেয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সুব্রতবাবু রাজ্যের শীর্ষ আমলা ছিলেন। চলতি এসআইআর প্রক্রিয়ার সময়ে হঠাৎ তাঁকে স্পেশাল রোল অবজারভার করে বাংলায় পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে রাজ্যের আরও ১২ জন সিনিয়র আইএএস অফিসারকে ইলেকটোরাল রোল অবজারভার হিসাবে নিয়োগ করা হচ্ছে।
Advertisement
নির্বাচন কমিশনের কর্তারা মনে করছেন, বাংলায় যে হারে মৃত ও ডুপ্লিকেট ভোটারের নাম বাদ যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল তা হয়নি। অনেক বিএলও কম্প্রোমাইজড হয়ে গেছে বলে কমিশনের একাংশের ধারনা। কমিশনের এক অফিসারের কথায়, কত নাম বাদ যাবে সে ব্যাপারে কোনও সংখ্যা কমিশনের মাথায় ছিল না। মোটামুটি ভাবে একটা ধারণা করা হয়েছিল। প্রাক্তন সিইও জওহর সরকারের মতের সঙ্গে এ ব্যাপারে কমিশনের মতের মিল রয়েছে। তবে দেখা যাচ্ছে, ৯০ শতাংশ ডিজিটাইজেশনের পরও মৃত, হদিস নেই ও ডুপ্লিকেট ভোটারের মোট সংখ্যা অনেক কম। সেই কারণেই ১৩ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।
যেহেতু খসড়া তালিকা প্রকাশের জন্য এক মাসও সময় বাকি নেই, তাই পর্যবেক্ষকরাও কালক্ষেপ করেননি। শনিবার থেকে তাঁকে তাঁরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। জেলা সফরে যাচ্ছেন। বিডিও, মহকুমা শাসক, ও জেলা নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলা শাসকদের দরকার মতো ফোন করছেন। ফলে প্রশাসনের অন্দরমহলে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, এদিন মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলার সমস্যা করার চেষ্টা করবে। দেখে নেবেন।অপরিকল্পিত ভাবে এসআইআর হচ্ছে বলেই বিএলওরা সমস্যায় পড়ছেন।
এদিনের বৈঠকে আমলাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “যাঁরা অনলাইনে জাতি শংসাপত্র ইত্যাদি ডকুমেন্টস অ্যাপ্লাই করতে পারছেন না, তাঁদের ব্যাপারটা দেখতে হবে। তাঁরা বাংলা সহায়তা শিবিরে এলে আপনারা (জেলা প্রশাসন) অনলাইনে আবেদন করিয়ে দিন। যাতে কেউ সমস্যায় না পড়েন। ক্যম্পগুলোকে আরও অ্যাকটিভ করুন”। মঙ্গলবার সব মন্ত্রী ও সচিব ও জেলা শাসকদের সঙ্গে দুপুর দেড়টায় আবার বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠকও জেলা শাসকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে থাকবেন। এখন দেখার, মঙ্গলবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও কী বলেন।