• অ্যাজ়িথ্রাল, টেলমা, কাইমোরাল ফোর্টও জাল! চার ব্র্যান্ডের ৫টি ব্যাচের ওষুধে প্রশ্ন
    এই সময় | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: বিপুল পরিমাণ জাল ওষুধ ধরা পড়ল বিখ্যাত তিনটি ব্র্যান্ড–সহ মোট চারটি ব্র্যান্ডের পাঁচটি ব্যাচের ওষুধের। কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারিতে ল্যাব টেস্টে ফেল করল জাল অ্যাজি়থ্রাল, টেলমা–এএম ও কাইমোরাল ফোর্টের মতো তিনটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও চালু ব্র্যান্ড। পাটনা, দিল্লি ও কলকাতার স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবে ওই জাল ওষুধগুলি ধরা পড়েছে ল্যাব টেস্টে। দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন (সিডিএসসিও) বাজারে ঘুরে বেড়ানো বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ওষুধের এই পাঁচটি ব্যাচকে ‘সন্দেহজনক বা ভুয়ো’ বলে সতর্কবার্তা জারি করেছে। কারণ, ব্যাচ নম্বরের সঙ্গে উৎপাদনকারী সংস্থার রেকর্ডের কোনও মিল পাওয়া যায়নি। তাই ওষুধগুলি নকল হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।

    গত অক্টোবরে বাজার থেকে বিভিন্ন ওষুধের ৯৫২টি ব্যাচের নমুনা পরীক্ষা করে সিডিএসসিও দেখতে পেয়েছে, এই পাঁচটি ব্যাচ মানোত্তীর্ণ নয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সন্দেহজনক ব্যাচগুলির গায়ে থাকা ব্যাচ নম্বর কোনও উৎপাদক সংস্থার নথির সঙ্গে খাপ খায় না। ফলে এগুলি বাজারে কী ভাবে পৌঁছল, তা নিয়েও উঠছে বড় প্রশ্ন। বিষয়টি জানানো হয়েছে পুলিশকেও যাতে তারা তদন্ত করে জাল ওষুধ তৈরির চক্রের হদিশ দিতে পারে। ওই পাঁচটি জাল ওষুধের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক অ্যালেম্বিকের তৈরি অ্যাজ়িথ্রাল–৫০০ (অ্যাজ়িথ্রোমাইসিন) ট্যাবলেট। রয়েছে গ্লেনমার্কের তৈরি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ টেলমা–এএম (টেলমিসার্টান ও অ্যাম্লোডিপিট কম্বিনেশন) ট্যাবলেট ও টরেন্ট ফার্মার তৈরি ফোলা ও ব্যথা কমানোর ওষুধ কাইমোরাল ফোর্ট (ট্রিপসিন ও কাইমোট্রিপসিন কম্বিনেশন) ট্যাবলেট।

    তবে সার্বিক ভাবে এই ওষুধগুলির ব্র্যান্ডকে জাল বলছে না সিডিএসসিও। কেন্দ্রীয় নথি বলছে, অ্যাজ়িথ্রালের ২৪০৮০০০২০১ ব্যাচ নম্বরের ওষুধ, টেলমা–এএমের ০৫২৪১২১৭এ ব্যাচ নম্বরের ওষুধ এবং কাইমোরাল ফোর্টের ২কেইউ৬এল০৫৭ ও ২কেইউ৬এল০৩০ ব্যাচ নম্বরের ওষুধগুলি জাল। টরেন্টেরই তৈরি পেনকিলার নুফিন (বুপ্রিনর্ফিন) ইঞ্জেকশনের ২ মিলিলিটার ভায়ালের একটি ব্যাচও (এলএম১৮৯০৭) জাল বলে জানিয়েছে সিডিএসসিও। তারা জানিয়েছে, ওষুধগুলি একেবারেই মানোত্তীর্ণ নয় বলে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে সিডিএসসিও যোগাযোগ করলে জানা যায় ওষুধগুলি যথাক্রমে অ্যালেম্বিক, গ্লেনমার্ক কিংবা টরেন্ট— কেউ–ই বানায়নি। তখনই বোঝা যায়, ওষুধগুলি জাল।

    চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই সব জাল ওষুধের ঝুঁকি মারাত্মক। ভুয়ো বা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়া জনস্বাস্থ্যের পক্ষেও ভয়ঙ্কর। ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শাম্ব সম্রাট সমাজদার বলেন, ‘ব্যাচ নম্বর যাচাই করে ফার্মেসিগুলির উচিত সন্দেহজনক ব্যাচ অবিলম্বে তুলে নেওয়া। নকল ওষুধ রোগীকে অকার্যকর চিকিৎসা, ভুল ডোজ়, এমনকী প্রাণঘাতী জটিলতার মুখে ঠেলে দিতে পারে।’ তাই সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। সিডিএসসিও জানিয়েছে, ওষুধের প্যাকেটে ত্রুটি, রং বা গঠনে অস্বাভাবিকতা, কিংবা ওষুধ সেবনে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ফার্মাসিস্ট বা চিকিৎসকের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করতে হবে। সন্দেহজনক প্যাক হাতে এলে সেই ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

    ইদানীং সারা দেশেই নকল ওষুধের রমরমা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতিমধ্যেই বাজারে QR কোড–ভিত্তিক ড্রাগ ট্র্যাকিং সিস্টেম চালুর প্রক্রিয়া দ্রুত সারার কাজে হাত দিয়েছে, যাতে উৎপাদন থেকে বিক্রি— সব ধাপেই ওষুধের উৎস এবং সত্যতা যাচাই করা যায়। জনস্বাস্থ্য–সংক্রান্ত এই সঙ্কট মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ওষুধ কোম্পানি এবং খুচরো বিক্রেতাদের সমান সতর্কতা ও সম্মিলিত পদক্ষেপই এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞরা।

  • Link to this news (এই সময়)