• পুলিশের নিয়োগে জালিয়াতি চক্রে ঝাড়খণ্ডের যোগ?
    এই সময় | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, আসানসোল ও ডোমকল: শুধু এ রাজ্য নয়, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির চক্র ছড়িয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে। গত রবিবারের ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালের কারবার চক্র ধরা পড়ল ঝাড়খণ্ডের ধানবাদেও। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ১৬ জনই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তারা ধানবাদ জেলার ঘনুয়াডিহির একটি লজ ভাড়া নিয়ে এই কারবার চালাচ্ছিল বলে সোমবার পুলিশ জানিয়েছে।

    ধানবাদ সিটি পুলিশের এসিপি ঋত্বিক শ্রীবাস্তব এ দিন জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ঘনুয়াডিহি এলাকায় টহল দেওয়ার সময়ে একটি বড় গাড়ি দেখতে পায় পুলিশ। সেখানে কয়েক জনকে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ঘনুয়াডিহির একটি লজে পৌঁছয়। সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগের পরীক্ষার জন্য নদিয়ার রানাঘাট, চাকদা ও হাঁসখালি এবং বীরভূমের নানা এলাকা থেকে একদল পরীক্ষার্থীকে নিয়ে এসে ওই লজে রাখা হয়েছে।

    পুলিশ আরও জানতে পারে, এই পরীক্ষার জন্য যে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে, তা তাদের হাতে রয়েছে বলে এই কারবারিরা দাবি করেছে। পরীক্ষার্থীদের সে সব প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করানো হচ্ছে। এর জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই কারবারিদের কাছ থেকে প্রচুর অ্যাডমিট কার্ড, প্রশ্নের উত্তর, প্রায় ৬৭টি মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, সচিত্র পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্কের পাসবই–সহ প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। চক্রটির খোঁজ পাওয়ার পরে ধানবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

    এই পরীক্ষাকে ঘিরে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিক্রির অভিযোগের পাশাপাশি সামনে এসেছে ভুয়ো পরীক্ষার্থী সেজে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনাও। সেই অভিযোগে দুই ভাই-সহ তিন জনকে রবিবারই গ্রেপ্তার করে মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানার পুলিশ। থানা সূত্রে সোমবার জানা গিয়েছে, পরীক্ষার্থী হিসেবে নদিয়ার তেহট্ট থানার বেতাই দক্ষিণ জিতপুরের বিধান শিকদারের সিট পড়েছিল ডোমকল ভবতারণ উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু বিধানের বদলে সেই পরীক্ষা দিতে যান তাঁর দাদা অরুণ শিকদার। তা জানতে পেরে বিধান ও অরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাশাপাশি এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় জেলার সাগরপাড়া থানার নরসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ মণ্ডলকেও। পরীক্ষা হলের ভিতরে মোবাইল নিয়ে গিয়ে ফোন করে বাইরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে সন্দীপের বিরুদ্ধে। রবিবার পরীক্ষার হলে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন যে শিক্ষক, তিনি মোবাইল–সহ সন্দীপকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

    ডোমকল থানার ধারণা, ধৃত তিন জনই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত জালিয়াত চক্রের সদস্য। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত, কী ভাবে চালানো হয় ওই জালিয়াতি, কী ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ডোমকলের এসডিপিও শুভম বাজাজ সোমবার বলেন, ‘ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, ষড়যন্ত্র ও পরীক্ষা ব্যবস্থায় কারচুপির মতো গুরুতর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।’ ধৃতদের সোমবার বহরমপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

  • Link to this news (এই সময়)