• নবান্ন থেকে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ পেশ করলেন মমতা
    আজকাল | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আর বেশি দিন বাকি নেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের। চতুর্থ বার ক্ষমতায় ফিরতে কোনও কসুর রাখবে না শাসকদল তৃণমূল। এই আবহে মঙ্গলবার নবান্নের সভাঘর থেকে গত তিনটি দফায় অর্থাৎ ১৫ বছরে রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান বা ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছিল, সরকারি দপ্তরগুলির কাজের খতিয়ানের বিশদ বিবরণও পেশ করবেন মমতা। করলেনও তাই।

    মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দফতরের সচিব এবং মন্ত্রীরা। দুপুর দেড়টার কিছু পরে শুরু হয় বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা ভিডিওর মাধ্যমে উন্নয়নের পাঁচালি পেশ করেন। এরপরেই ছ’টি ভাষায় রিপোর্ট কার্ডের উদ্বোধন করেন মমতা। তিনি জানান, রিপোর্ট কার্ডের তথ্য এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে তা সকলের কাছে পৌঁছে যাবে।

    মমতা বলেন, “২০১১ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখনের তুলনায় অর্থনৈতিক সাফল্য (জিএসডিপি) বেড়ে এখন প্রায় ২০ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে।” তিনি জানান, রাজ্যের কর এবং রাজস্ব বেড়েছে ৫.৩৩ গুণ বেড়েছে। এ ছাড়াও, ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বেড়েছে ১৭.৬৭ শতাংশ। এ ছাড়াও, ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার বেড়ছে ১৭.৬৭ শতাংশ। সোশ্যাল সেক্টর এক্সপেন্ডিচার বেড়েছে ১৪.৪৬ শতাংশের বেশি। কৃষি ক্ষেত্রে বেড়েছে ৯.১৬ গুণ বেশি। ফিজ়িক্যাল সেক্টর এক্সপেন্ডিচার বেড়েছে ৬.৯৩ গুণ বেশি। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল অর্থাৎ ১০ বছরে ১০ বছরে এক কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রসীমার বাইরে আনা হয়েছে।

    বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন তিনি। মমতা বলেন, “রাজ্যে দু’কোটিরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সারা দেশে আমরা বেকারত্ব হার আমরা ৪০ শতাংশ কমিয়েছে।” রাজ্যে ছ’টি অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি হচ্ছে বলে জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আরও এক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।’’ দেউচা পাচামিতেও এক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে, আশাবাদী মমতা। তিনি আরও জানান, রাজ্যে মেট্রোর কোচ, লোকাল কোচ, ভারী যন্ত্রপাতি, জাহাজ তৈরি হচ্ছে। সিমেন্ট, ইস্পাত কারখানার কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে রাজ্যে এক কোটি ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ কাজ করছেন। ৪২ লক্ষ ছেলেমেয়েকে স্কিল ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।’’

    গোটা ভারতের মডেল বাংলা, এমনই দাবি করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ১২ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেছি, যা গোটা ভারতের মধ্যে বাংলা মডেল।’’

    লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক রাজ্যে বিজেপি দেখানোর জন্য করছে। বিহারে ভোটের আগেও করেছে। আমরা তো প্রতি বছরই ১২ হাজার করে দিই। পাঁচ বছরে ৬০ হাজার।’’ দু’কোটি ২১ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়াও, কন্যাশ্রী পায় এক কোটি জন। রূপশ্রী প্রকল্পের অধীনে ২২.০২ লক্ষ মেয়েকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মমতা।

    কোন প্রকল্পে কত টাকা খরচ হয়েছে সেই সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘‘সবুজশ্রী প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। আনন্দধারা প্রকল্পে খরচের পরিমাণ এক কোটি ২১ লক্ষ। স্বাস্থ্যখাতে আমাদের বাজেট ১৪ বছরে ছ’গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয় দু’কোটি ৪৫ লক্ষ পরিবারকে। খরচ ১৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এছাড়াও জয় বাংলা প্রকল্পে বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ২০ লক্ষ ৫৭ হাজার, বার্ধক্য ভাতা ৫৫ লক্ষ ৬১ হাজার, মানবিক ভাতা সাত লক্ষ ৫৯ হাজার, জয় জোহার দু’লক্ষ ৯৮ হাজার, তপশিলি বন্ধু ১১ লক্ষ ৪৫ হাজার, সমব্যথী ২৮ লক্ষ মানুষ পাচ্ছেন। মোট খরচ ১০ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

    ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে রাজ্যে নানা জনকল্যাণ মূলক কর্মসূচি চালু হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০২৫ এই ১৫ বছরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, গ্রামোন্নয়ন ও নারী কল্যাণ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে, তার পরিসংখ্যান পেশ করা হবে। প্রতিটি দপ্তর ইতিমধ্যেই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে লাভবান মানুষের সংখ্যা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে।

    স্বাস্থ্য, শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ধাপে ধাপে ৯৪টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে তৃণমূল সরকার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধুর মতো প্রকল্প আম জনতাকে নগদের জোগান সুনিশ্চিত করেছে। কেন্দ্র প্রাপ্য আটকে দেওয়ার পরও কর্মশ্রী, বাংলার বাড়ি প্রকল্প চালু রাখা হয়েছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্প আজ গোটা দেশের কাছে মডেল মহিলা ভোট আকৃষ্ট করার জন্য। 

    মঙ্গলবারই মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন মমতা। আজ রাতে থাকবেন বহরমপুরেই। বুধবার তাঁর সভা রয়েছে মালদহের গাজলে। বৃহস্পতিবার সভা রয়েছে বহরমপুর স্টেডিয়ামে।
  • Link to this news (আজকাল)