জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। সেই নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা বাংলা। সোমবার সেই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত (Surya Kanta) এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। ২৫,৭৫২ জনের চাকরি বাতিল হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, ‘নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তা আর মেরামতের সুযোগ নেই। গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’ সেই সময়েই ৩ মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
সেই মতো নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইন্টারভিউ লিস্টও বেরিয়েছে। কিন্তু তাতে অনেক যোগ্য চাকরিহারা সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ। এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়।
কিন্তু সেই আর্জি শুরুতেই খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। সু্প্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘পুরো প্যানেল বাতিল করে দেওয়ার পরে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন বলছেন, বহু লোকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে, রায় পুনর্বিবেচনা করা হোক। আমাদের হাতে কোনও জাদুদণ্ড নেই।’ প্রয়োজনে মামলাকারীরা কলকাতা হাইকোর্টে আর্জি জানাতে পারেন বলেও জানিয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিশ্চয় মেধাবীদের নিয়োগ করা হবে।’
অন্য দিকে, ২০১৬ সালের প্যানেলে অনেক গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি প্রার্থীদেরও নাম বাদ গিয়েছিল। তাঁদের একাংশ হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, এসএসসি টেন্টেড হিসেবে ৩৫১২ জনের তালিকা প্রকাশ করলেও সুপ্রিম কোর্টে তারাই জানিয়েছে টেন্টেড সংখ্যা ৭২৯৩। এখন এই ৭২৯৩ প্রার্থীদের বিস্তারিত জানিয়ে এসএসসিকে নতুন করে তালিকা প্রকাশ করতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বুধবার গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি পদে আবেদনপত্র জমা করার শেষ তারিখ। তবে এতে কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না বিচারপতি।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার আর্জি গ্রহণ করল না প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছে, এ বিষয়ে পূর্বে যে রায় ছিল, তা-ই বহাল থাকবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হওয়ায় অনেক ভাল পড়ুয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, মেনে নিয়েছে শীর্ষ আদালত। তবে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ভাল পড়ুয়া হলে তিনি আবার ঠিক নিযুক্ত হয়ে যেতে পারবেন।
এসএসসি-র ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল দুর্নীতির অভিযোগে বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি যায়। আদালত জানিয়েছিল, নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়ার আয়োজন করতে হবে কমিশনকে। চলতি বছরের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। যাঁরা ‘দাগি অয্যোগ্য’ (টেন্টেড) হিসাবে চিহ্নিত, তাঁরা নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সুযোগ পাবেন না। তাঁদের বেতনও ফেরত দিতে হবে। বাকিরা ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দেবেন। সেই অনুযায়ী কমিশন নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করে এবং নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় নতুন তালিকা। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ এ বিষয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় পুনরায় বিবেচনা এবং নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত করার আবেদন জানান তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেককে বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেক যোগ্য সুযোগই পাননি। এ নিয়ে সোমবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু আর্জি গ্রহণ করতেই চায়নি সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এটা ঠিক যে, কোনও প্রক্রিয়া খারিজ হলে ভাল পড়ুয়ারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু যাঁরা ভাল তাঁরা আবার নিযুক্ত হয়ে যেতে পারবেন।’’
এসএসসি-র নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়েছিল। গত ২৬ নভেম্বর সেই সমস্ত মামলা ফিরিয়ে দেওয়া হয় কলকাতা হাই কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এক জন ‘দাগি’ চাকরিপ্রার্থীকেও চাকরি দিতে পারবে না এসএসসি। অভিযোগ ছিল, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ‘দাগি’ প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদেরও সুযোগ দিচ্ছে এসএসসি। কমিশন দাবি করে, আদালতের রায় পড়ে তাদের মনে হয়েছে, দাগি প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। নতুন করে তাঁরা চাকরিও পেতে পারেন। কলকাতা হাই কোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছিল আগেই। পরে সেই মামলা আবার সুপ্রিম কোর্টে যায়। আদালত বলে দেয়, কোনও দাগি চাকরিপ্রার্থীকে চাকরি দেওয়া যাবে না।এসএসসি-র অন্য সমস্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে যত মামলা বিচারাধীন রয়েছে, তা হাই কোর্ট শুনবে। সুপ্রিম কোর্ট আপাতত এই সংক্রান্ত আর কোনও মামলা শুনবে না। যদি হাই কোর্টের সিদ্ধান্তে কোনও সমস্যা তৈরি হয়, আবার তা নিয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানানো যাবে। এর পর ফের সোমবার চাকরিপ্রার্থীদের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হল।