‘অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কি লাল কার্পেট পাতব?’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কড়া সুর সুপ্রিম কোর্টের
প্রতিদিন | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কি আমাদের রেড কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া উচিত?” ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক মামলায় কড়া সুরে এমনই প্রশ্ন তুলল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। স্পষ্ট ভাষায় সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল রোহিঙ্গাদের আইনি মর্যাদা নির্ধারণ না করে তাঁদের অধিকার নিয়ে কোনও আলোচনা করা যাবে না। একইসঙ্গে আদালত প্রশ্ন তুলেছে, “ভারত সরকার কি কখনও রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে?”
জেলবন্দি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা উধাও হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা। আবেদনকারী পক্ষের দাবি ছিল, রোহিঙ্গাদের যদি ভারত থেকে বের করে দিতে হয় তবে তা আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত। আবেদনে অভিযোগ জানানো হয়, গত মে মাসে দিল্লি পুলিশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল। তারপর থেকে আর তাঁদের কোনও খোঁজ নেই। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি চলছিল প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে।
শুনানির শুরুতেই এই বিষয়ে বিচাপতি প্রশ্ন করেন, “ভারত সরকারের কি এমন কোনও নির্দেশ রয়েছে যেখানে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে? যদি কেউ এখানে অবৈধভাবে প্রবেশ করে তাহলে তাঁদের এখানে রাখার জন্য আমাদের কি কোনও বাধ্যবাধকতা রয়েছে? যদি ওদের ভারতে থাকারাইনি অধিকার না থাকে এবং তাঁরা অনুপ্রবেশকারী হয়, তাহলে সেই সব অনুপ্রবেশকারীকে স্বাগত জানানোর জন্য আমাদের লাল গালিচা বিছিয়ে দেওয়া উচিত?” এই প্রেক্ষিতে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থী মর্যাদা চাইছেন না তাঁরা। শুধুমাত্র আইন অনুযায়ী নির্বাসন প্রক্রিয়া হোক এটাই চান।
উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রথমে, আপনি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বা বেড়া টপকে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকলেন। তারপর আপনি বলছেন, এখন যেহেতু আমি এসেছি, ভারতীয় আইন আমার উপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত, এবং আমার সন্তানদের জন্য খাদ্য, আশ্রয় এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। আমরা কি এভাবে আইনি পরিধি বাড়াব?” বিচারপতি আরও বলেন, ভারতে ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ দরিদ্র নাগরিক রয়েছেন যাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি এটাও জানান, অবৈধভাবে কেউ প্রবেশ করলেও তাঁদের উপর নির্যাতন করা উচিত নয়।
উল্লেখ্য, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব এর আগেও দেখিয়েছে দেশের বিচার ব্যবস্থা। এই বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের নিয়ে আরেকটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে ভারত সারা বিশ্বের শরণার্থীদের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। এই দেশ কোনও ধর্মশালা নয়। এছাড়া, মে মাসে, আদালত আরেকটি আবেদনে মন্তব্য করেছিল, রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার গল্পটি রূপকথার মতো শোনাচ্ছে।