সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোনালিদের জন্য অপেক্ষায় পাইকর। তবে কবে ফিরবে মেয়ে-নাতিরা, তার উত্তর পাননি সোনালির বাবা। বাংলাদেশের আদালতে অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন (Sonali Khatun)-সহ পাঁচজনের জামিন মঞ্জুর হলেও পাইকর গ্রামের বাড়িতে এখনো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন না পরিজনরা। গত কয়েক মাস ধরেই সোনালি, সুইটি এবং তাঁদের তিন শিশুকে ছাড়া পাইকরের বদু শেখ, লজিনা বিবি, আমির শেখরা গভীর উদ্বেগে। বাংলায় কথা বলার কারণে বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া মেয়েরা আদালতে জামিন পেলেও তাঁরা কবে দেশে ফিরবেন, এ কথার কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। তাই পাইকর, দর্জিপাড়া, ফকিরপাড়ার গ্রামজুড়ে অনিশ্চয়তার মেঘ।
সোনালির বাবা বদু শেখ প্রতিটি মুহূর্তে কান পেতে রাখছেন ফোনের দিকে। সোমবার জামিনের খবরে চোখে জল এলেও মনে শান্তি নেই তাঁর। তিনি বলেন, “মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। কত কষ্ট, কী অবস্থায় আছে— ভেবে বুক ফেটে যায়। জামিন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেশে ফিরবে কবে? না দেখা পর্যন্ত শান্তি নেই।” মায়ের মনও একইভাবে ব্যথায় ভারী। পেটের দায়ে দিল্লি গিয়েছিল মেয়েরা। বিজেপি সরকার ও মোদি সরকারের আমলেই তাঁদের পুশব্যাক করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তা ও তৎপরতায়ই আজ নতুন করে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।”
বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশে পুশব্যাক হওয়া বীরভূমের পাইকর এলাকার অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন অবশেষে আইনি স্বস্তি পেলেন। সোমবার চাঁপাই নবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট সোনালি-সহ ছ’জনকে জামিন দিয়েছে। স্থানীয় সমাজসেবী ফারুক আলির জিম্মায় কুড়ি হাজার টাকার বন্ডে তাঁদের মুক্তি মঞ্জুর হয়। পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ জানিয়েছেন, জামিনের পর সোনালিদের জন্য ঘরভাড়া নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারই সোনালিকে প্রসূতি বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।
সুইটি বিবির মা লজিনা বিবি ও দাদা আমির শেখ উদ্বেগে ভরা কণ্ঠে বলেছেন, তাঁদের মেয়েরা ও নাতিরা কবে ফিরবে, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই। প্রতিটি দিন কাটছে অশ্রু আর অপেক্ষায়। পরিবারের পাশাপাশি পাইকর, দর্জিপাড়া ও ফকিরপাড়াতেও ক্ষোভের আবহ। দিল্লিতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে কেবল বাংলা বলা নিয়ে তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করেছিল দিল্লি পুলিশ। এরপরই গত জুন মাসে সোনালি, তাঁর স্বামী, সুইটি এবং তাঁদের তিন শিশুকে অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে বিএসএফ। পরে ২০ আগস্ট বাংলাদেশ পুলিশ তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক করে এবং মামলা রুজু করে। সেই থেকেই তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন।
এই পুশব্যাক ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট ২৬ সেপ্টেম্বর চার সপ্তাহের মধ্যে ছয়জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চায়, কোনও যাচাই ছাড়াই কীভাবে ছয়জন ভারতীয়কে বাংলাদেশে পাঠানো হল। বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সোনালিদের ৩ ডিসেম্বর আবার হাজিরা দিতে হবে। তারপরই দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। যদিও বাংলাদেশি আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের কোনও সক্রিয় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। সোমবারের জামিনের পর পরিবারের একটাই আশা, অন্তঃসত্ত্বা সোনালি ও তাঁর শিশুসহ সবাই যেন দ্রুত দেশে ফিরতে পারে।