খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুতির সূচনাতেই সামনে এল চাঞ্চল্যকর হিসেব। রাজ্যের বিভিন্ন বুথে এনুমারেশন ফর্ম ফেরত আসার পর নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তথ্য বলছে, মৃত, নিখোঁজ ও স্থানান্তরিত ভোটারের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কমিশনে পৌঁছনো সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে— মোট ৪৬ লক্ষ ২০ হাজার এনুমারেশন ফর্ম ফেরত এসেছে। এর মধ্যে ২২ লক্ষ ২৮ হাজার ভোটারকে মৃত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই নামগুলি ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছে।
কমিশনের নথি অনুযায়ী, নিখোঁজ ভোটারের সংখ্যা ৬ লক্ষ ৪১ হাজার। পাশাপাশি ১৬ লক্ষ ২২ হাজার ভোটার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। আরও আছে ১ লক্ষ ৫ হাজার ‘ডাবল এন্ট্রি’-র ঘটনা, যা সংশোধন না হলে ভোটার তালিকার নির্ভুলতা প্রশ্নের মুখে পড়ত।
Advertisement
সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি উত্তর কলকাতায়। সেখানে মোট ভোটারের ৬.৯১ শতাংশকে মৃত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে— সংখ্যায় যা ১ লক্ষ ৪ হাজার ৭৬ জন। দক্ষিণ কলকাতায়ও একই হার, ৬.৯১ শতাংশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মৃত ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ, যা জেলায় মোট ভোটারের ৬.৯ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত ভোটারের সংখ্যা ৮৮ হাজার— মোটের ৩.৪৭ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম মৃত ভোটার পাওয়া গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে— মাত্র ১.৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহে কমিশনের হাতে আসে ২২০৮টি বুথের তালিকা, যেখানে দাবি করা হয়েছিল— কোনও মৃত, নিখোঁজ বা স্থানান্তরিত ভোটার নেই। কমিশনের পর্যবেক্ষণে এই দাবি ‘অস্বাভাবিক’ মনে হওয়ায় সোমবারই সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। মঙ্গলবারই সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যাটা নাটকীয়ভাবে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮০-তে— যা কমিশনের প্রাথমিক সংশয়কেই আরও জোরদার করেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই সবচেয়ে বেশি এমন ‘অস্বাভাবিক’ বুথ রয়েছে— রায়দিঘিতে ৬৬, কুলপিতে ৫৮, মগরাহাটে ১৫ এবং পাথরপ্রতিমায় ২০।
এদিনই জেলা শাসকদের উদ্দেশে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বহুতল আবাসনে বুথ তৈরির নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। নির্দেশ অনুযায়ী, ৭০০ থেকে ৮০০ ভোটার থাকলেই কোনও কমপ্লেক্সে বুথ করা যাবে।
নতুন তথ্য-পরিসংখ্যানে পরিষ্কার— এই বছরের এসআইআর প্রক্রিয়া রাজ্যে ভোটার তালিকার নথিকে আরও নিখুঁত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে, তবে তার সঙ্গে বাড়ছে প্রশাসনিক চাপও।