• রাজ্যে এসআইআর চলাকালীনই ভোট–প্রস্তুতি, বড় বৈঠক ডাকলেন সিইও মনোজ আগরওয়াল
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর–এর মাঝেই ভোট–প্রস্তুতির গতি বাড়াতে বড় উদ্যোগ নিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল চলতি মাসের ১১ তারিখ ২৫টি এজেন্সিকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছেন। সাধারণত ভোটের কয়েক মাস আগে যে সমন্বয় বৈঠক করা হয়, তা এত আগে হওয়ায় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ–সহ তামিলনাডু, অসম, কেরল এবং পুদুচেরিতে ভোট। তার আগে থেকেই রাজ্য জুড়ে ভোট–কেন্দ্রিক সমস্ত পরিকাঠামো ও নিরাপত্তা–প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে চাইছে কমিশন।

    প্রসঙ্গত, রাজ্যে ইতিমধ্যেই এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘এনুমারেশন ফর্ম’ বিলি এবং অধিকাংশ পূরণ করা ফর্ম জমা নেওয়ার কাজ এগিয়ে গেলেও এখনও ডিজিটাইজ হওয়ার কাজ অনেকটাই বাকি রয়েছে। তার মধ্যেই ভোট–পূর্ব নিরাপত্তা ও নজরদারি সংক্রান্ত এজেন্সিগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন সিইও মনোজ আগরওয়াল। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা হোক বা বিধানসভা— ভোটের আগে এই এজেন্সিগুলিকেই কাজে লাগানো হয় বেআইনি লেনদেন, পাচার, অস্ত্র–চক্র, কালো টাকা বা সন্দেহজনক আর্থিক কার্যকলাপের উপর কড়া নজরদারি চালাতে।

    Advertisement

    বৈঠকে যাদের ডাকা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি, রাজ্য পরিবহন দপ্তরের প্রধান সচিব, সমবায় দপ্তরের প্রধান সচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, আয়কর দপ্তরের তদন্ত শাখার ডিজি, সমস্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকরা, রাজ্যের আবগারি দপ্তরের কমিশনার, বাণিজ্যকর কমিশনার, ইডি’র কলকাতা শাখার বিশেষ ডিজি, বন দপ্তরের প্রধান প্রধান সংরক্ষক, নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর পূর্বাঞ্চলীয় ডিজিপি, রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তরের প্রিন্সিপাল এডিজি, কাস্টমস কমিশনার, কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ডের প্রতিনিধিরা, ভারতীয় উপকূলরক্ষীর পূর্বাঞ্চলীয় আইজি, বিএসএফ–এর অতিরিক্ত ডিজি, ডাক বিভাগের প্রধান ডাকমাস্টার জেনারেল, সিআইএসএফ–এর কলকাতা আইজি, পূর্ব রেলের আরপিএফ আইজি, শশস্ত্র সীমা বলের আইজি, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক নির্বাহী পরিচালক, বেসামরিক বিমান চলাচল ব্যুরোর আঞ্চলিক পরিচালক, রাজ্য সিভিল এভিয়েশনের আধিকারিক এবং পশ্চিমবঙ্গের এসএলবিসি কনভেনর।

    প্রসঙ্গত, দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চলতি এসআইআর প্রক্রিয়া সাত দিন পিছিয়ে দিল কমিশন। রবিবার জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এনুমারেশন ফর্ম সংগ্রহ ও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করার কাজ শেষ করতে হবে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে। একই সময়ের মধ্যে বুথ ব্যবস্থাপনাও সম্পন্ন করতে হবে। তার পর ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে খসড়া ভোটার তালিকা তৈরির কাজ। নতুন সূচি অনুযায়ী খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে ১৬ ডিসেম্বর—যার পর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে অভিযোগ বা আপত্তি জানানোর সময়সীমা।

    কমিশন জানিয়েছে, ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি বা দাবির নিষ্পত্তির কাজ করবে ইআরও–রা। ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের দায়িত্ব থাকবে অভিযোগ শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সন্দেহ দূর করা এবং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে আলোচনার জন্য ডাকা। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা তৈরির অনুমতি নিতে হবে কমিশনের কাছে। সব শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

    রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এসআইআর চলাকালীনই এত তাড়াতাড়ি এই বিস্তৃত সমন্বয় বৈঠক ডাকায় এটি স্পষ্ট হচ্ছে যে, কমিশন চাইছে আগে থেকেই সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে, যাতে ভোটের সময় কোনও বেআইনি কার্যকলাপ, অর্থ–পাচার বা সীমানা জুড়ে নিরাপত্তা ভাঙার সম্ভাবনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)