অর্ণব আইচ: চিন থেকে আসছে সিল্কের কাপড় আর গরমের পোশাক। তাই চিনের কাপড় ব্যবসায়ীকে পাঠাতে হবে আগাম টাকা। তাহলেই কলকাতাগামী চিনের জাহাজে তোলা হবে কাপড়। এই আশ্বাস পেয়েই এক মিডলম্যানকে ৪০ লাখ টাকা আগাম দিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। কিন্তু চিন থেকে আর কাপড় এসে পৌঁছয়নি ওই ব্যবসায়ীর কাছে। তার বদলে একটি নথি তাঁকে দেখানো হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ী ওই ব্যাঙ্কের নথি পরীক্ষা করে জানতে পারেন যে সেটিই জাল। সস্তায় চিনের কাপড় আমদানির নাম করে জাল নথি দেখিয়েই হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ওই বিপুল টাকা।
অভিযুক্ত ওই মিডলম্যান পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা থানা এলাকার রামমোহন মল্লিক গার্ডেন লেনের বাসিন্দা। তাই মধ্য কলকাতার পোস্তা এলাকার ওই ব্যবসায়ী শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হন শিয়ালদহ আদালতের। আদালতের নির্দেশে এই ব্যাপারে বেলেঘাটা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি এই পদ্ধতিতে রাজ্যের আরও ব্যবসায়ীর টাকা হাতিয়েছে কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, রবীন্দ্র সরণির ওই কাপড়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে বহুদিন ধরেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে চিনের বিভিন্ন অঞ্চল, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের কাপড়ের ব্যবসায়ীদের। মূলত চিন থেকে নানারকমের কাপড় আমদানি করেন ওই ব্যবসায়ী। ২০২৩ সালের অক্টোবরে অভিযুক্ত ওই মিডলম্যান ব্যবসায়ী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবি করেন, তাঁর বিদেশে কাপড় আমদানি ও রপ্তানির ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ওই মিডলম্যান ব্যবসায়ীকে বেলেঘাটায় নিজের অফিসে ডেকে বলেন, অনেক সস্তায় তিনি চিন থেকে কাপড় আমদানির ব্যবস্থা করতে পারেন। প্রথমে ব্যবসায়ী রাজি হননি। ক্রমে ব্যবসায় বেশি লাভের ফাঁদে পড়ে ব্যবসায়ী ওই মিডলম্যানের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করতে থাকেন। গত বছর নভেম্বর মাসে ওই মিডলম্যান ব্যবসায়ী পরিবারকে জানান, তিনি চিনের কাপড়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শুধু তাঁর কথায় চিনের কাপড়ের ব্যবসায়ী অনেক সস্তায় তাঁকে কাপড় পাঠাতে রাজি হয়েছেন। ৬৫ লাখ টাকার কাপড় তিনি পেয়ে যাচ্ছেন মাত্র ৫৭ লাখ টাকায়। তার জন্য আগাম ৪৭ লাখ টাকা ব্যবসায়ীকে দিতে হবে। কলকাতা বন্দরে জাহাজ থেকে কাপড় নামার পর তাঁর গোডাউনে মজুত হলে বাকি দশ লাখ টাকা তিনি দেবেন।
এতে ব্যবসায়ী রাজি হয়ে যান। তিনি ওই মিডলম্যানকে প্রথম দফায় ১২ লাখ টাকা, দ্বিতীয় দফায় ১৯ লাখ টাকা দেন। অভিযুক্ত বাকি টাকা চাইলে ব্যবসায়ী তাঁকে নগদে ন’হাজার টাকা দেন। এভাবে ৪০ লাখ টাকা আগাম দেওয়ার পর বাকি সাত লাখ টাকা এখনই দিতে পারছেন না বলে জানান। এতেই খুশি হয়ে মিডলম্যান ব্যবসায়ীকে জানান, সাত দিনের মধ্যেই চিন থেকে তাঁর হাতে পৌঁছে যাচ্ছে কাপড়। তার বদলে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নথি তাঁকে দেখানো হয়, যাতে চিনের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ‘প্রমাণ’ রয়েছে।
ব্যবসায়ীর অভিযোগ, এর পর দীর্ঘসময় কেটে গেলেও কাপড় আর চিন থেকে আসেনি। প্রথমে মিডলম্যান মোবাইল বন্ধ করে দেন। এর পর ব্যবসায়ী বেলেঘাটায় মিডলম্যানের অফিসে যান। মিডলম্যান তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু তার পরও সেই সামগ্রী না পৌঁছলে ব্যবসায়ী বেলেঘাটার অফিসে গিয়ে দেখেন, অফিস বন্ধ। এর পরই সন্দেহের বশে ব্যবসায়ী ওই ব্যাঙ্কের নথি পরীক্ষা করে জানতে পারেন সেটি জাল। তারই ভিত্তিতে তিনি আদালত ও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত মিডলম্যানের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।