পুরুষতন্ত্রিক বেড়াজাল এখনও ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা, বিবাহ বিচ্ছিন্না মুসলিম মহিলাদের মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: সুপ্রিম কোর্ট
আনন্দবাজার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে এমন মহিলাদের মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মঙ্গলবার এমনটাই মন্তব্য দেশের শীর্ষ আদালতের। ১৯৮৬ সালের রায় উল্লেখ করে তালাকপ্রাপ্ত মহিলাদের সমানাধিকার ও মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে পুরুষতান্ত্রিক বেড়াজাল এখনও যেন ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা। ছোট শহর ও গ্রামগুলিতে বৈষম্যের ঘটনা বেশি ঘটে। আইনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও এন কোটেশ্বর সিংহের পর্যবেক্ষণ, বিয়ের সময় কোনও পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েকে বা মেয়ে-জামাইকে যা উপহার দেওয়া হবে বিচ্ছেদ হলে তা ফেরত চাওয়ার আবেদন জানাতে পারে মেয়ের পরিবার।
বিবাহ বিচ্ছেদ অধিকার সুরক্ষা (মুসলিম মহিলা সংক্রান্ত ১৯৮৬ সালের প্রণয়ণ হাওয়া আইন)-এর ৩ নম্বর ধারায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের রায় খারিজ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। জানা গিয়েছে, কলকাতা হাই কোর্টের রায়টি ছিল বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া এক মহিলার প্রাক্তন স্বামীর পক্ষে। কলকাতা হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী বিচ্ছেদের সময়ে মহিলার দাবি করা সম্পত্তির বেশ কিছু অংশ ফিরিয়ে দেওয়া থেকে স্বামীকে ‘ছাড়’ দেওয়া হয়েছিল। আদালত সূত্রে খবর, প্রায় ১৭ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকার সম্পত্তি ফেরত চেয়ে মহিলার তরফে দায়ের হয়েছিল ওই মামলা। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে দেশের শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘১৯৮৬ সালের আইনের পরিধি ও উদ্দেশ্য হল মুসলিম মহিলার মর্যাদা ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যা ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত মহিলার অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’’ আদালতের নির্দেশ, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে মহিলার আইনজীবী তাঁর মক্কেলের ব্যাঙ্ক আ্যাকাউন্ট-সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য দেবে প্রাক্তন স্বামীর আইনজীবীকে। সেই অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে প্রাক্তন স্বামীর পাঠানো টাকা। এই প্রসঙ্গে আদালতের নির্দেশ, আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে আদালতে ‘সম্মতিসূচক হলফনামা’ জমা দিতে হবে মহিলার প্রাক্তন স্বামীকে। নির্দেশ অমান্য করা হলে নয় শতাংশ হারে অতিরিক্ত সুদ-ও দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে বিয়ে হয়েছিল মামলাকারী মহিলার। তার কিছু দিন পর থেকেই নবদম্পতির পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়েছিল। ২০০৯ সালে তিনি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তার পরে ১২৫ ও ৪৯৮-এ ধারায় যথাক্রমে ভরণপোষণ ও গার্হস্থ্য হিংসার মামলা দায়ের করেন। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর তাঁর বিচ্ছেদ হয়।