রাজ্যের ওয়াকফ এস্টেটের ৫০ শতাংশের বিবরণ দাখিল কেন্দ্রীয় পোর্টালে, তিন দিনে শেষ না হলে বিকল্প রাস্তার প্রস্তুতি বোর্ডের
আনন্দবাজার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
একেবারে শেষ মুহূর্তে রাজ্য সরকার গত বৃহস্পতিবার সমস্ত জেলাশাসককে নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির বিবরণ কেন্দ্রের ‘উমিদ’ পোর্টালে নথিভুক্ত করতে হবে। দাখিল করতে হবে বিবরণ। মঙ্গলবার রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডের তরফে বলা হল, ইতিমধ্যেই ওয়াকফ এস্টেটের ৫০ শতাংশের নথিভুক্তিকরণ সম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু বাকি তিন দিনে কি ১০০ শতাংশ সম্পত্তির বিবরণ নথিভুক্ত করা সম্ভব হবে? এই প্রশ্নেই বিকল্প রাস্তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ওয়াকফ বোর্ডে।
পশ্চিমবঙ্গে ৮,০৬৩টি ওয়াকফ এস্টেটের অধীনে ৮২,৬০০টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন বিচারপতি সহিদুল্লা মুন্সি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ৫০ শতাংশ এস্টেটের বিবরণ কেন্দ্রীয় পোর্টালে নথিভুক্ত হয়েছে। সময়ে শেষ না-হলে মতোয়াল্লিদের (ওয়াকফের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন) পাশে আমরা থাকব।’’ আনুষ্ঠানিক ভাবে বিকল্প রাস্তার কথা না-বললেও একান্ত আলোচনায় বোর্ডের কর্তারা বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা বৃদ্ধি করেনি ঠিকই। কিন্তু একটা জায়গায় ‘ছাড়’ দিয়ে রেখেছে। তা হল, সময়ে নথিভুক্ত না হলে রাজ্যের ওয়াকফ ট্রাইবুনালে সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করা যাবে। এতেই আশার আলো দেখছেন বোর্ডের কর্তারা।
ওয়াকফ এবং ‘মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’-এর কাজের সঙ্গে নিয়মিত যুক্ত থাকা রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আশা করা যাচ্ছে সময় বাড়বে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টই সেই আশা জাগিয়ে রেখেছে।’’ বোর্ড সূত্রে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের পোর্টাল বন্ধ না-হলে ট্রাইবুনালে আবেদন করা যাবে না। সে কারণেই ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার মধ্যে যাঁরা পারবেন, তাঁরা নথিভুক্তকরণের কাজ করবেন।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের সর্বাত্মক বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে যে ওয়াকফ আইন বলবৎ হবে না, তা একাধিক বার বক্তৃতায় জানিয়ে সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ সংক্রান্ত একগুচ্ছ মামলা ঝুলে থাকলেও বিবরণ নথিভুক্তিকরণের বিষয়ে শীর্ষ আদালত কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। অন্য একাধিক ধারায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিলেও আদালত আইনত এই বিষয়টিকে এখনও পর্যন্ত ছাড় দিয়ে রেখেছে। গত ৬ জুন থেকে কেন্দ্রীয় পোর্টালে ওয়াকফ সম্পত্তির বিবরণ নথিভুক্ত করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্বে এসে রাজ্যের এ হেন নির্দেশিকায় সংখ্যালঘুদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে অভিমত সরকারেরই প্রথম সারির অনেকের। ভোটের কয়েক মাস আগে যা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন তাঁরা। যদিও ওয়াকফ বোর্ড আপৎকালীন ভিত্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে চাইছে। কত শতাংশ সম্পত্তির বিবরণ শেষ দিন পর্যন্ত নথিভুক্ত করা যায়, সে দিকেই তাকিয়ে বোর্ড। না হলে ট্রাইবুনালের বিকল্প রাস্তায় যাবে তারা।