• উত্তর ও মধ্য ভারতে কাঁপুনি, টানা শীতের আশা কম বঙ্গে
    এই সময় | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: সন্ধে হতেই ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করছেন উত্তর ও মধ্য ভারতের মানুষ। কিন্তু ডিসেম্বর পড়ে যাওয়ার পরেও গায়ে হাফ সোয়েটার চড়ানোর মতো ঠান্ডাও পড়েনি কলকাতায়। রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলির সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামেনি। এ বার কি তা হলে ‘কম গরমের’ শীতকাল কাটাতে চলেছে বাংলা? সারা বছর ভ্যাপসা গরম আর বৃষ্টি নিয়ে কাটানোর পরে ডিসেম্বর আর জানুয়ারির দু’টো মাসই একটু আরামে কাটানোর সুযোগ থাকে রাজ্যের। এ বার কি তা হবে না? আবহবিদরা কিন্তু আশা দেখাতে পারছেন না।

    অথচ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেই পাঞ্জাবের ফরিদকোটের রাতের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গিয়েছিল। ডিসেম্বর পড়তেও সেখান রাতের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রির ঘরে। মাঝে একদিন দেশের সমতলের মধ্যে শীতলতম হয়েছিল হরিয়ানার হিসার। তাপমাত্রা নেমেছিল ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, এ বছর ‘হাড় কাঁপানো’ শীতের এই প্রকোপ শুধু পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমেও কড়া ঠান্ডা ও টানা শৈত্যপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে মৌসম ভবন। ওই শীত এবং শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব ছত্তিসগড় ও ঝাড়খণ্ডেও এসে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলা? ১ ডিসেম্বর শেষরাতে (ক্যালেন্ডার মতে ২ ডিসেম্বর) কলকাতার রাতের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়ছিল। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় সাড়ে তিন ডিগ্রি বেশি!

    বড়দিনের সময় পর্যন্ত দেশের আবহাওয়া কেমন থাকতে চলেছে, সে বিষয়ে যে ‘এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ ফোরকাস্ট’ প্রকাশ করেছে মৌসম ভবন, তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশের উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে যে ঠান্ডা ও শুকনো বাতাস ঢুকতে শুরু করেছে, তার প্রবাহ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ‘তেমন শক্তিশালী’ হবে না। ফলে ‘উত্তুরে’ হাওয়া বাংলার দরজা পর্যন্ত পৌঁছলেও তার ক্ষীণ প্রবাহ রাজ্যে ‘কড়া শীত’ নামাতে পারবে না বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজি–র (আইআইটিএম) প্রাক্তন বিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ মডেল গাইডেন্স–এ আমরা যা দেখছি তার ভিত্তিতে বলা যায়, বাংলায় শীতের প্রকোপ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কয়েক দিন ঠান্ডার পরে তাপমাত্রা বাড়বে, কিছুদিন পরে ফের ঠান্ডা পড়বে। এ ভাবেই চলবে।’ বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে পুবালি হাওয়ার গতি বেশ শক্তিশালী। জলীয় বাষ্পপূর্ণ ওই বাতাস সমুদ্রের উপর দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে ক্রমাগত ঢুকতে থাকবে। ওই পুবালি বাতাসই ‘উত্তুরে’ হাওয়ার কামড়কে দুর্বল করে দিতে চলেছে।

    আইআইটিএম–এর তথ্য বলছে, ২০২৪–এর ১৫ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেটাই ছিল গত মরশুমে রাজ্যের সমতলের শীতলতম রাত। এর কিছুদিন পরে ১১ জানুয়ারি কলকাতার রাতের তাপমাত্রা নেমেছিল ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত শীতে সেটা ছিল মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ বছর কি তা হলে শীতে রাজ্যের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তার বেশিই থাকবে? আবহবিদরা জানাচ্ছেন, কোনও একটা দিন তাপমাত্রা রেকর্ড জায়গায় নামবে কি না, সে বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এইটুকু বলা যায় যে বাংলায় শীতের প্রকোপ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। উত্থান–পতনই চলতে থাকবে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত।

  • Link to this news (এই সময়)