• এসআইআর নিয়ে উত্তাল সংসদ, বিরোধীদের চাপে আগামী সপ্তাহে লোকসভায় আলোচনা
    বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: সারাদিনে দফায় দফায় চারবার বৈঠক। দু’বার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে। দু’বার লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে। তার পরেও বিরোধীদের অবস্থান টলাতে পারেনি সরকার পক্ষ। এসআইআর ইশ্যুতে মঙ্গলবারও সংসদের দুই কক্ষেই ওয়েলে নেমে চলল প্রতিবাদ। সকালে সংসদ চত্বরে চলে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন সহ বিক্ষোভ। সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পাশে ছিলেন তৃণমূলের মমতা ঠাকুর এবং বাপি হালদার। লাগাতার প্রতিবাদের মুখে পড়ে শেষমেশ নির্বাচনী সংস্কারের মোড়কে এসআইআর (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) নিয়ে সংসদে আলোচনায় রাজি হল মোদি 

    সরকার। আগামী মঙ্গল-বুধবার (৯ এবং ১০ ডিসেম্বর) লোকসভায় ১০ ঘণ্টা ধরে চর্চা হবে। তার আগে, সোমবার ‘বন্দেমাতরম’ গানের সার্ধশতবর্ষ পূরণ নিয়ে ছ’ ঘণ্টার আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করবেন শুভারম্ভ। তৃণমূল সহ বিরোধীরাও তৈরি। উভয় বিষয়ের আলোচনায় সরকারকে সমালোচনার শূলে চড়াবে বলেই ‘ওয়ার্মআপ’ শুরু করেছে তৃণমূল। লোকসভার পর চর্চা হবে রাজ্যসভায়। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ওই আলোচনার আগে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান ড্রামাবাজ মোদি। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে, কেন সংসদের বুলেটিনে ‘বন্দেমাতরম’, ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল?

    এদিন সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়। ওম বিড়লার ডাকা বিরোধীদের বৈঠকেও সরব হন তৃণমূলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কাকলি ঘোষ দস্তিদার। মন্ত্রী রিজিজু, অর্জুনরাম মেঘওয়াল, বিজেপির নিশিকান্ত দুবে, সমাজবাদী পার্টির ধর্মেন্দ্র যাদব, এনসিপি (শারদ পাওয়ার)-র সুপ্রিয়া সুলে, কংগ্রেসের গৌরব গগৈ, কে সুরেশ সহ একঘর সাংসদ সদস্যদের সামনে স্পিকার কক্ষের ওই বৈঠকে বিজেপির উদ্দেশে কাকলিদেবী বলেন, বন্দেমাতরম নিয়ে এত কথা বলছেন। আনন্দমঠ উপন্যাস পড়েছেন? বাংলা আর বাঙালির জাতীয়তাবাদ জানেন? বিজেপি বাংলায় গিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙে, রামমোহন রায়কে অপমান করে। আর সংসদে জাতীয়তাবাদের কথা বলে। এ তো দ্বিচারিতা। বৈঠকে স্পিকারও এক কৌশলী পদক্ষেপ নেন। এদিন বন্দেমাতরম প্রসঙ্গে বক্তব্য রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের স্মার্টফোনে সেটি ‘লাইভ’ দেখেছেন ওম বিড়লা। 

    বৈঠকে তিনি কাকলিদেবীকে বলেন, আপনার লিডার, আমাদের সকলের মমতাদিদি তো সাড়ে সাত মিনিট বন্দেমাতরম নিয়ে বলেছেন। এই দেখুন ভিডিও। তাই আপনারাও সংসদে আলোচনায় রাজি হয়ে যান। তৃণমূল পালটা জানায়, ঠিক আছে। কিন্তু এসআইআর নিয়েও আলোচনা করতে হবে। ঘটনাচক্রে, বিরোধীদের সুরে সুর মিলিয়ে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবি করেছেন। 

    বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠকে রিজিজু জানিয়েছেন, এসআইআর শব্দটি বলতে পারব না। নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে হবে আলোচনা। আর এ সপ্তাহে আলোচনা অসম্ভব। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আসছেন। মোদিজি ব্যস্ত থাকবেন। কিছুটা টানাপোড়েনের পর রাজি হয়ে যায় বিরোধীরা। চর্চা হবে এক সপ্তাহ পর। তাই আগামী তিনদিন কী করবে, তা ঠিক করতে আজ সকালে সংসদে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের কক্ষে স্ট্র্যাটেজি বৈঠকে বসছে মোদি বিরোধী মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’।
  • Link to this news (বর্তমান)