বাধ্যতামূলক নয়, সঞ্চার সাথী বিতর্কে ঢোঁক গিলল সরকার
বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: এবার থেকে স্মার্টফোন বিক্রির আগেই ‘ফ্যাক্টরি সেটিংস’ অবস্থায় প্রি-ইনস্টল করে রাখতে হবে সরকারি ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ! এমনই ফতোয়ায় দেশজুড়ে প্রবল আলোড়ন ও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পিছু হটল কেন্দ্রীয় সরকার। টেলিকম মন্ত্রক গত ২৮ নভেম্বর মাসে এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করে একটি বিধিও তৈরি করে ফেলেছে—এটা ফাঁস হতেই প্রবল চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের ৭৫ কোটি স্মার্ট ফোন গ্রাহকদের উপর নজরদারি ও চরবৃত্তি করার জন্যই মোদি সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’ উপন্যাসের শব্দবন্ধ ধার করে কংগ্রেস বলেছে, বিগ ব্রাদার নাগরিকদের উপর নজরদারির প্ল্যান করেছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। শুধু বিরোধী দলগুলি নয়, জানা যাচ্ছে শিল্প মহলও ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে অ্যাপল, স্যামসায়ের মতো আন্তর্জাতিক মোবাইল সংস্থাগুলি। কারণ, কারও সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সম্মিলিত ক্ষোভের জেরে মঙ্গলবার মোদি সরকার জানিয়েছে, এই অ্যাপ ব্যবহার করা এবং মোবাইলে ইনস্টল করে রাখা বাধ্যতামূলক নয়। ইচ্ছা করলে অ্যাপ ডিলিট করা যাবে।
কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, সাইবার প্রতারণায় সাধারণ মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই অ্যাপ থাকলে সন্দেহজনক ফোন, ভিডিও কলকে চিহ্নিত করে সতর্ক করার ব্যবস্থা থাকবে। সুতরাং এই উদ্যোগ নাগরিকদের উপকারের জন্যই। কিন্তু সব ছাপিয়ে সরকার নাগরিকদের উপর প্রত্যক্ষ নজরদারি চালাবে, এই অভিযোগই প্রকট হয়ে ওঠে। রাহুল গান্ধী হুমকি দেন, ‘এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংসদে আমি বলব।’ তারপরই কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানান, এই অ্যাপ মোবাইলে ইনস্টল থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তিনি বলেন, ‘অপপ্রচার হচ্ছে। যে কোনও প্রি ইনস্টলড অ্যাপের মতোই এই অ্যাপও ইচ্ছা হলে গ্রাহকরা আনইনস্টল করে দিতে পারবে। তারা চাইলে ইনঅ্যাকটিভও করে রাখতে পারবে। এই অ্যাপ ব্যবহার করা ঐচ্ছিক। বাধ্যতামূলক নয়।’ মন্ত্রী একথা বললেও, টেলিকম মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে কিন্তু সাফ লেখা রয়েছে, ‘বিধি দ্বারা নিশ্চিত করা হচ্ছে যে, এই অ্যাপ নতুন মোবাইল কেনার সময় আগে থেকেই সেই ফোনে ইনস্টল করা থাকবে। উৎপাদন সংস্থাদের সেকথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সেই অ্যাপ ইচ্ছা করলেও ডিলিট করা যাবে না। নিষ্ক্রিয় করা যাবে, কিন্তু ফোন থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে না।’ কিন্তু প্রবল প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধ মনোভাবের আঁচ পেয়ে সরকার ঢোঁক গিলছে এখন। জানা যাচ্ছে, স্যামসাং, শাওমি, অ্যাপল কোনও সংস্থাই এই নিদান মানতে রাজি হয়নি।
কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেছেন, ‘২০২৪ সালেই শুধু সাইবার প্রতারণায় ভারতের মানুষ ২২ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির শিকার হয়েছে। আমর সাধারণ মানুষকে সঞ্চার সাথী অ্যাপের সুবিধা দিয়ে সেই প্রতারণা যাতে না ঘাটে তার আগামী সতর্কবার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা আমাদের দায়িত্ব। নাগরিকরা যদি তা না নিতে চান, নেবেন না। কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।’