নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চাপের মুখে রবিবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে খসড়া তালিকা প্রকাশের সময়সীমা বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন। বেড়েছে ইনিউমারেশন পর্ব শেষের সময়ও। ৪ ডিসেম্বরের বদলে ১১ ডিসেম্বর। কিন্তু সেই নির্দেশনামা কি বাংলার ক্ষেত্রে ‘কার্যকর’ নয়? এই প্রশ্ন ওঠার কারণ, মঙ্গলবার জারি হওয়া রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের নয়া ফতোয়া। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জেলাশাসকদের সাফ জানানো হল, জমা পড়া সব ফর্ম আপলোডের কাজ বিএলওদের শেষ করতে হবে মঙ্গলবারের মধ্যেই। নিজেদের কাছে কোনও ফর্ম রাখা চলবে না। অর্থাৎ জমা হওয়া সমস্ত ফর্ম আপলোডের কাজ শেষ।
কমিশনের তরফে রবিবার এসআইআরের সময় বৃদ্ধি সংক্রান্ত ওই নির্দেশিকার পরই পশ্চিমবঙ্গের সিইও মনোজ আগরওয়ালের জারি করা এই নয়া বিজ্ঞপ্তি ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। যদিও সিইওর ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত যে সাত দিন সময় মিলেছে, তাতে ভোটার তালিকা আরও নিখুঁতভাবে তৈরির কাজে লাগানো হবে। সেজন্যই বিএলওদের হাতে থাকা যাবতীয় ফর্ম আপলোডের কাজ মঙ্গলবারের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও কমিশনের তথ্যই বলছে, ইতিমধ্যে রাজ্যে ৯৪.৩৭ শতাংশ অর্থাৎ ৭ কোটি ৪৫ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮৯২টি ফর্ম ডিজিটাইজেশন শেষ। অধিকাংশ বিএলওই কাজ সেরে ফেলেছেন। সিইও দপ্তরও তা জানে। তাই কাজ গুটিয়ে ফেলা এবং জমা পড়া ফর্ম ‘মিলিয়ে দেখার’ তাগিদে এই বিজ্ঞপ্তি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাহলে ‘বাদ যাওয়া’ নামের হিসেবটা দ্রুত স্পষ্ট হবে। সেই কারণেই হাতে থাকা বাড়তি সময়ে যাবতীয় তথ্য পুনরায় যাচাইয়ের নির্দেশ জারি হয়েছে বিএলওদের জন্য। বলা হয়েছে, অ্যাপে উল্লেখ করা প্রতিটি এন্ট্রি ফের ফর্মের হার্ডকপির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। যে ফর্মগুলি অন্য ব্যক্তি পূরণ করেছেন, তাতে বিশেষ নজর দিতে হবে। জেলাশাসকদের সাফ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জমা পড়ে থাকা কোনও ইনিউমারেশন ফর্ম ২ ডিসেম্বরের পরে আর গ্রহণ করা হবে না। মঙ্গলবারের পর যে ফর্ম আসবে, তা দিনের দিন আপলোড করতে হবে। ১১ ডিসেম্বরের পর যদি কোনও বাড়ি থেকে ফর্ম জমা দেওয়া হয়, তাহলে অ্যাপে সেগুলিকে ‘আনকালেক্টেবল’ বা অসংগ্রহযোগ্য হিসেবেই দেখাতে হবে। পাশাপাশি, যেসব বুথে বাবা-মা-সন্তানের ম্যাপিং ৫০ শতাংশ বা তার বেশি, সেগুলির তথ্য ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। জন্ম-মৃত্যু তথ্য পোর্টাল বা তার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছ থেকে মৃত ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সঙ্গে বাতিল রেশন কার্ডের তথ্যও। তারপর সবটা যাচাই করে মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে ইআরওদের। যদি কোনও বিএলও ভুল এন্ট্রি করে থাকেন, তাও সংশোধন করতে হবে।
এদিকে বিভ্রান্তি বেড়েছে আরও একটি তথ্য নিয়ে। কমিশন আগে জানিয়েছিল, রাজ্যে ২ হাজার ২০৮টি বুথে কোনও মৃত বা স্থানান্তরিত ভোটার নেই। এদিন আবার তাদের দাবি, সংখ্যাটা ২২০৮ থেকে কমে ৪৮০-তে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৪৬ লক্ষ ভোটারের ম্যাপিং করা যায়নি। তার মধ্যে মৃত, স্থানান্তরিত, নিখোঁজ বা ফর্ম সংগ্রহ না হওয়া ভোটাররা রয়েছেন। ফলে এ পর্যন্ত তালিকা থেকে এই ৪৬ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়া নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে।