• অনলাইনে ভুল? দায় ভোটারের, এডিট করতে পারছেন না বিএলওরা, তথ্যে গোলমাল হলে নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা
    বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। সেই মতো ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করে বুথ লেভেল অফিসারের (বিএলও) কাছে জমা দিয়েছেন ভোটার। অথচ সেই ফর্ম আপলোড করতে পারেননি বিএলও। ভূরি ভূরি এমন উদাহরণ রয়েছে। এমন ‘সংকট’ এ পর্যন্ত শুধু অফলাইনে শোনা যাচ্ছিল। এবার তা জাল ছড়াল অনলাইনেও। যেসব ভোটার অনলাইনে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে কোথাও ভুল করে ফেলেছেন, তার দায় আর কমিশন নেবে না। যদি তাঁর নাম তালিকায় না থাকে বা ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে লিঙ্ক না হয়, সেই বোঝা বইতে হবে সংশ্লিষ্ট ভোটারকেই। কমিশন সূত্রে এমন খবরই মিলেছে।

    অনলাইনে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে আধার কার্ড ও ফোন নম্বর যুক্ত করে কমিশনের ওয়েবসাইটে লগ ইন করা বাধ্যতামূলক ছিল। ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পর রাজ্যে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ ভোটার অনলাইনে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছেন। কমিশন আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, সমস্ত অনলাইন ফর্ম যাচাই করতে হবে বিএলওদের। প্রয়োজনে তাঁরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উলটো চিত্র। অনলাইনে ফর্ম পূরণের সময় ভোটার যদি কোনও তথ্য দিতে ভুল করে থাকেন, বিএলওদের তা সংশোধনের উপায় নেই। কারণ বিএলও অ্যাপে তেমন কোনও সংস্থানই নেই। এমন একাধিক ঘটনা সামনে আসছে। অথচ ভোটারের দেওয়া ওই ভুল তথ্যই গ্রহণ করছে অ্যাপ! এবং ওই ভুল তথ্য সম্বলিত ফর্ম ডিজিটাইজড হয়ে যাচ্ছে। এমনই অভিযোগ জানাচ্ছেন ভুক্তভোগী বিএলওরা। 

    যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথের দায়িত্বে থাকা বিএলও প্রশান্ত চৌধুরির দাবি, সুপ্রিয় সরকার নামে এক ভোটার অনলাইনে ফর্ম পূরণ করেছিলেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল ওই ব্যক্তির। অথচ তিনি ইনিউমারেশন ফর্মের নীচের ডানদিকের অংশ পূরণ করেছিলেন। অর্থাৎ যে অংশটি ২০০২ সালের তালিকায় নাম না থাকা ভোটারদের পূরণ করতে হত। সুপ্রিয় সরকারের অনলাইনে পূরণ করা ফর্ম যাচাইয়ের সময় এই ভুল চোখে পড়ে প্রশান্তবাবুর। তিনি বিএলও অ্যাপে নিজেই সুপ্রিয় সরকারের ওই তথ্য সংশোধনের চেষ্টা করেন। কিন্তু তা করতে পারেননি। কারণ সংশোধন করতে গেলেই ওই সংশ্লিষ্ট ভোটারের ফর্মের ছবি আপলোড করতে বলছিল অ্যাপ। সুপ্রিয় সরকার যেহেতু অনলাইনে ফর্ম পূরণ করেছিলেন, তাই বিএলও প্রশান্ত চৌধুরির কাছে সেই ফর্ম থাকার কথা নয়। তাই তিনি তা দিতে পারেননি। 

    আবার দেখা গিয়েছে, অনলাইনে ফর্ম পূরণের সময় এক ভোটার বাবার নামের জায়গায় নিজের নাম বসিয়ে দিয়েছিলেন। বিএলওর নজরে আসা সত্ত্বেও তা তিনি সংশোধন করতে পারেনি। আরও আশ্চর্যের বিষয়, ওই তথ্য সহজেই অ্যাপ গ্রহণ করে এবং ভুল ফর্মই ডিজিটাইজ হয়ে যায়। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘অনলাইন ফর্ম যাচাইয়ের দায়িত্বও বিএলওদের উপর। সেক্ষেত্রেও কোনও ভুল থাকলে তার দায় বর্তাবে বিএলওর উপরই। কিন্তু অ্যাপে এমন সমস্যা থাকলে তার দায় কে নেবে?’ তাঁর আরও অভিযোগ, ইআরওদের জানানো সত্ত্বেও তাঁরা প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। 

    স্বাভাবিকভাবেই তাই ফর্ম পূরণ করতে কোনও ভুল হয়ে গেলে তার পুরো দায় ভোটারকেই নিতে হবে। আর তাই বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন, এসআইআরের সঙ্গে ভোটাধিকারের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। এহেন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে কেন এমন ত্রুটিপূর্ণ অ্যাপ ব্যবহার করা হল, যাতে আখেরে ভোটারকেই ফল ভোগ করতে হয়? 
  • Link to this news (বর্তমান)