• সিগারেটের দামে রাজ্যের ভাগ কেড়ে কোষাগার ভরবে কেন্দ্র, জিএসটি কমানোর পর উৎসবের মরশুমেই বাংলার রাজস্ব ক্ষতি ৩০০ কোটি
    বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা ছিলই। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেকথা বারবার উল্লেখ করেছিলেন। আর গত ২২ সেপ্টেম্বর নয়া জিএসটি হার চালু হওয়ার পর প্রথম মাসেই সেই আশঙ্কা পরিণত হল বাস্তবে। উৎসবের মরশুমে বাংলায় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা! এখন প্রশ্ন হল, এই বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ জোগাবে কে? কারণ,  নয়া জিএসটি নীতির জেরেই এই পরিস্থিতি। তাহলে দায় তো কেন্দ্রেরই! কিন্তু বাস্তবে ক্ষতিপূরণের বদলে আরও বেশি করে রাজ্যের ভাগ কেড়ে কোষাগার ভরতেই উদ্যোগী মোদি সরকার। সৌজন্যে ‘সেন্ট্রাল এক্সাইজ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫’ এবং ‘হেল্থ সিকিউরিটি সে ন্যাশনাল সিকিউরিটি সেস বিল, ২০২৫’।

    সদ্য লোকসভায় পেশ হয়েছে দু’টি বিল। সিগারেট-খইনি-পান মশলার মতো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক পণ্যে (সিন গুডস) বাড়তি সেস বসাতেই এই পদক্ষেপ। এর জেরে কয়েক গুণ দাম বাড়বে সিগারেট-পান মশলার। তবে এহেন মূল্যবৃদ্ধিতে মূলত লাভবান হবে কেন্দ্রই। প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, জিএসটি কমপেনসেশন সেসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ডিসেম্বরেই। তাই নতুন কেন্দ্রীয় সেস বসাতে চলেছে মোদি সরকার। এই শুল্কের পুরো টাকাই ঢুকবে কেন্দ্রের কোষাগারে। রাজ্যগুলি একটি টাকাও পাবে না। এর পরিবর্তে আইনে সংশোধনী এনে জিএসটির হার বৃদ্ধির ব্যবস্থা করলে রাজ্যগুলির লাভ হত। এক জিএসটি বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, তামাকজাত পণ্যে জিএসটি কমপেনসেশন সেস এবং জিএসটি মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৫৩ শতাংশ। সেই টাকার ভাগ পেত রাজ্য। তা উঠে যাচ্ছে। বর্তমান আইনে ৪০ শতাংশের বেশি জিএসটি করা সম্ভব নয়। আইনে বদল এনে জিএসটির হার বৃদ্ধি করলে রাজ্যের কোষাগারে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা আসত। তাতে নয়া জিএসটি ২.০-এর জেরে হওয়া লোকসান গায়ে লাগত না। এপ্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্ব প্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা ঠিক এই দাবিই তুলেছিলাম। কিন্তু রাজ্যের কথায় কোনও আমল না দিয়ে কেন্দ্র নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। এমনিতেই রাজ্যের কোটি কোটি টাকা আটকে রেখেছে। তার উপর কেন্দ্রের কারণেই জিএসটি আদয়েও ঘাটতি শুরু হল। এর জবাব কে দেবে?’ 

    গত ২২ সেপ্টেম্বরের লাগু হয় জিএসটি ২.০। অক্টোবর ছিল দুর্গাপুজো এবং অন্যান্য উৎসবের মাস। প্রতি বছর এই সময়ই রাজ্যে সর্বাধিক বেচাকেনা হয়। স্বাভাবিকভাবেই জিএসটি বাবদ রাজস্ব আদায়ও বেশি হয়ে থাকে। সেই সংক্রান্ত রিটার্ন ফাইল হয় মূলত নভেম্বরে। মাসের শেষে জিএসটি আদয়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ হতেই সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—উৎসবের মরশুমে বাংলার জিএসটি বাবদ রাজস্ব আদায় কমেছে সাড়ে সাত শতাংশ। ২০২৪ সালের যেখানে এসেছিল ৪ হাজার কোটি, তা চলতি বছরে কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। এমনকী জিএসটি ২.০ চালুর পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ আট দিনেও রাজ্যের লোকসান হয়েছে তিন শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় এবার ১০০ কোটি টাকা কম জিএসটি আদায় হয়েছে।

    ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের জিএসটি বাবদ রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪৬ হাদার ৯০০ কোটি টাকা। এবছর তা অনেকটাই কমবে বলে আশঙ্কা। সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হুঁশিয়ারি, ‘রাজ্যকে এই ভাবে সমস্যায় ফেলার বিরুদ্ধে জবাব দেবে সাধারণ মানুষই।’     
  • Link to this news (বর্তমান)