মায়ের মৃত্যুর এক বছর পার, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধে ঘুরছেন যুবক
বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর: প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে এক বছর আগে। অথচ, সরকারি খাতায় তিনি জীবিত! তাই অ্যাকাউন্টে নিয়মিত ঢুকছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা। টাকা ঢোকা বন্ধ করতে মায়ের মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে পুরসভা থেকে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প, মহকুমা শাসকের অফিস—ছুটে ছুটে হয়রান তাঁর ছেলে। তারপরও টাকা ঢোকা বন্ধ হচ্ছে না! যেখানে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ পেতে মহিলাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, সেখানে টাকা পাওয়া বন্ধ করতে বিস্তর দৌড়ঝাঁপের ঘটনা বিরল বই কী! কেন মৃত মহিলার অ্যাকাউন্টে সরকারি প্রকল্পের টাকা ঢোকা বন্ধ করা যাচ্ছে না, কোনও সদুত্তর নেই প্রশাসনের কাছেও।
বরানগর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিক কলোনির বাসিন্দা অঞ্জলি শীল। ৫৫ বছর বয়সি অঞ্জলিদেবী ২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে মারা যান। তিনি আগে থেকেই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে মাসে হাজার টাকা করে পেতেন। তাঁর মৃত্যুর পরও এই টাকা ঢুকছে দেখে অঞ্জলিদেবীর ছোটো ছেলে অঞ্জন শীল স্থানীয় কাউন্সিলারের দ্বারস্থ হন। তিনি তাঁকে পুরসভায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। অঞ্জনবাবু পুরসভাকে চিঠি দিয়ে বলেন, ‘মায়ের মৃত্যু হয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বন্ধ করুন।’ প্রমাণ হিসেবে তিনি মায়ের মৃত্যুর শংসাপত্র ও আধারের কপি জমা দেন। তাতে কোনও সুরাহা হয়নি। এরপর থেকে তিনি দুয়ারে সরকার শিবির, বারাকপুর মহকুমা শাসকের অফিস মিলিয়ে অন্তত ১০ বার বিভিন্ন জায়গায় দৌড়েছেন। টাকা অবশ্য নিয়মিত ঢুকেই চলেছে!
হতাশার সুরে অঞ্জনবাবু বলেন, ‘প্রথমে মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে চার হাজার টাকা তুলেছিলাম। ভেবেছিলাম, এটা মায়ের আগের টাকা। পরে বুঝলাম ওই টাকা মায়ের মৃত্যুর পর জমা পড়েছে। সরকারি টাকা খরচ করলে তো আমাকে যে কোনও দিন তা ফেরত দিতেই হবে। তাই ওই টাকা ফের অ্যাকাউন্টে জমা করেছি। পুরসভায় গেলে বলছে, আমাদের বন্ধ করার ক্ষমতা নেই। মহকুমা শাসকের অফিসে গেলে বলছে, পুরসভা থেকে প্রসেস করাতে হবে। আমি চাই, মায়ের অ্যাকাউন্টে অবিলম্বে টাকা ঢোকা বন্ধ হোক। এখনও পর্যন্ত যে টাকা জমা পড়েছে, তা ফেরতও দিতে চাই।’
বরানগর পুরসভার সিআইসি (স্বাস্থ্য) রামকৃষ্ণ পাল বলেন, ‘এই প্রকল্পে নাম তুলতে বরানগরেও মহিলাদের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। মৃত মহিলার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানো বন্ধ করে আগ্রহী মহিলাদের সুবিধা দিলে তাঁরা উপকৃত হবেন।’