মানবিকতার খাতিরে ফেরাতে রাজি কেন্দ্র, বাংলাদেশ থেকে আজই বাড়ি ফিরছেন বীরভূমের সোনালি?
প্রতিদিন | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানবিকতার খাতিরে সোনালি বিবিকে ফেরাতে রাজি হল কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারি নিয়ম মেনেই সোনালিদের দেশে ফেরানো হবে। সেই কথা এদিন সুপ্রিম কোর্টে জানালেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বাংলাদেশ আদালত সোনালি বিবিকে মুক্তি দিয়েছেন। তবে তিনি এখনও ওই দেশেই আছেন। তাহলে কি আজ, বুধবারই তিনি সীমান্ত পেরিয়ে বাড়ি ফিরবেন? সেই প্রশ্ন উঠছে।
সুপ্রিম কোর্ট আগেই কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছিল সোনালি বিবি ওরফে সোনালি খাতুন ও তার নাবালক সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। কলকাতা হাই কোর্টও নির্দেশ দিয়েছিল অবিলম্বে সোনালিদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সুপ্রিম ও হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপ করছিল না বলে অভিযোগ। সোনালি বিবি ন’মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। তাঁকে ও নাবালক ছেলেকে দেশে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ আদালতে আর্জি জানানো হচ্ছিল। দিন কয়েক আগেই সেই আর্জি মেনে আদালত সোনালি বিবির জামিন মঞ্জুর করেছে। কবে তিনি দেশে ফিরবেন? সেই প্রশ্ন উঠেছে।
সোনালি খাতুনকে সব রকম মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স এবং ছেলের জীবনধারনের জন্য রাজ্যকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সোনালিকে বীরভূমে তাঁর বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। বীরভূমের চিফ মেডিকেল অফিসারকে সোনালির চিকিৎসার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি বলে খবর।
সোনালি বিবিদের বাড়িতে ফেরানো নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছিল রাজ্য সরকারও। দিল্লিতেও চাপ বাড়ছিল বলে খবর। সোনালি বিবির বাবা বুদু শেখও দিনের পর দিন মেয়েকে ফেরাতে আর্জি জানাচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত সেই আর্জিকে গুরুত্ব দিয়েছিল আদালত। সোনালি বিবিদের দ্রুত দেশে ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও কেন্দ্র এই ইস্যুতে গরিমসি করছিল বলে অভিযোগ। তাহলে কি আদালতের নির্দেশ ও রাজ্যের চাপে কেন্দ্রীয় সরকার সোনালিদের ফেরাতে রাজি হল?
বাংলাদেশের আদালত জামিন দিয়েছে। এরপরেও ভারত সরকারের তরফে তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সোনালি বিবির কাতর আবেদন, “যত দ্রুত সম্ভব ভারতে ফেরানো হোক। আমার সন্তান যেন ভারতেই জন্মগ্রহণ করে।” একই সঙ্গে এদিনই প্রতি মুহূর্তে তাঁর পাশে থাকার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান তিনি। সোনালি খাতুন ধন্যবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা পরিযায়ী শ্রমিকদের উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামকেও।
সোনালিদের জন্য অপেক্ষায় পাইকর। তবে কবে ফিরবে মেয়ে-নাতিরা, তার উত্তর পাননি সোনালির বাবা। সোনালির বাবা বদু শেখ প্রতিটি মুহূর্তে কান পেতে রাখছেন ফোনের দিকে। সোমবার জামিনের খবরে চোখে জল এলেও মনে শান্তি নেই তাঁর। তিনি বলেন, “মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। কত কষ্ট, কী অবস্থায় আছে— ভেবে বুক ফেটে যায়। জামিন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেশে ফিরবে কবে? না দেখা পর্যন্ত শান্তি নেই।”
দিল্লিতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে কেবল বাংলা বলা নিয়ে তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করেছিল দিল্লি পুলিশ। এরপরই গত জুন মাসে সোনালি, তাঁর স্বামী, সুইটি এবং তাঁদের তিন শিশুকে অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে বিএসএফ। পরে ২০ আগস্ট বাংলাদেশ পুলিশ তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক করে এবং মামলা রুজু করে। সেই থেকেই তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন।