প্রাইভেসি নষ্ট! বহুতলবাসীরা চাইছেন না ‘দুয়ারে ভোটকেন্দ্র’
প্রতিদিন | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কৃষ্ণকুমার দাস: ‘দুয়ারে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র’-র আড়ালে বহুতল আবাসনের ভিতরে সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘দাপাদাপি’ চাইছেন না কলকাতার অধিকাংশ বহুতলের বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের আড়ালে ‘বিজেপির ইচ্ছা’কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ‘দুয়ারে ভোটকেন্দ্র’ তৈরির আড়ালে বহুতল আবাসনের ‘প্রাইভেসি ও শান্তি’ দুইই সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার চরম আশঙ্কায় ভুগছেন নাগরিকরা। বস্তুত এই কারণে আজ, বুধবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ডাকা ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে বহুতল আবাসনের পরিচালকদের বৈঠকে কমিশনের নয়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে একজোট হতে চলেছেন বহুতলের ভোটাররাও।
উল্লেখ্য, বিজেপির গোপন ‘অ্যাজেন্ডা’ পূর্ণ করতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কলকাতার বড় বহুতল আবাসনের ভিতরেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্র চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে বহুবছর ধরে চলে আসা বহুতলগুলির ‘প্রাইভেসি ও নিজস্বতা’ রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার। তাই মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ডাকে ৩০০-র বেশি ভোটার বসবাস করেন এমন বহুতল আবাসনের সভাপতি ও সম্পাদকদের নিয়ে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আজ, বুধবার ‘দুয়ারে ভোটকেন্দ্র’ চালুর বিরুদ্ধে একজোট হতে পারে ‘শহর কলকাতা’।
কলকাতার দক্ষিণে বেহালা বা হরিদেবপুরের ডায়মন্ড সিটি, সাউথ সিটি অথবা উত্তরের মেট্রোপলিটন সিটির মতো আবাসনে হাজারের বেশি ভোটার থাকেন। এতদিন এই আবাসনগুলির লাগোয়া স্কুল বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন আবাসনগুলির ভিতরেই কমিউনিটি হল বা স্পোর্টস সেন্টারে পোলিং স্টেশন খুলতে চাইছে। কমিশনের যুক্তি, আবাসনের বাসিন্দাদের ‘দুয়ারে পোলিং স্টেশন’ চালু করলে বহুতলের ভোটের হার আরও বাড়বে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এমন প্রস্তাবের আড়ালে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন বহুতলের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি বহুতলের পরিচালন সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক কমিশনের এমন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের পালটা যুক্তি–১) ‘দুয়ারে পোলিং স্টেশন’ চালু হলে ভোটের তিন থেকে পাঁচদিন আগে সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভারী বুটের দাপাদাপি শুরু হয়ে যাবে। নষ্ট হতে পারে ফুলের বাগান, সুইমিং পুল। আবাসনের ভিতরে উর্দিপরা সেনার দাপটে শিশু-কিশোরদের মনে নয়া আতঙ্ক তৈরি হবে। ২) ভোটের দিন আবাসনের ভিতর যদি রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং বড়মাপের অশান্তি হয় তবে স্থায়ী শান্তি বিঘ্নিত হবে। ৩) একবার বহুতলের ভিতরে পোলিং স্টেশন শুরু হলে পরে নানা নির্বাচনে আবাসনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কমিউনিটি হলগুলিকে পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘বারাক’ হিসাবে ব্যবহার করা শুরু হলে আটকানো যাবে না। ৪) কমিশনের উদ্যোগেই বহুতলের ভিতরে ভোটের আগে বা পরে হাজার হাজার ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের গোডাউন তৈরির সম্ভাবনাও দেখছেন একাধিক সম্পাদক। ৫) এতদিন ধরে মহানগরের অধিকাংশ বহুতলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলগুলির সক্রিয়তা অনেকটাই কম ছিল। কিন্তু এবার ‘দুয়ারে পোলিং সেন্টার’-এর হাত ধরে বহুতলে বহিরাগত ওই রাজনৈতিক কর্মীদের দাপট বাড়লে ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’ বিঘ্নিত হবে বলে আশঙ্কা।