• প্রয়োজনীয়তাই বাড়াচ্ছে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার
    আনন্দবাজার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • কৃষি সহায়ক যন্ত্র কেড়ে নিচ্ছে খেতমজুরদের কাজ— এমনই অভিযোগে সরব অনেকে। যদিও কৃষকদের একাংশের যুক্তি, গ্রামাঞ্চলের মানুষ নানা পেশায় যুক্ত হয়ে পড়ায় খেতমজুর এখন আর আগের মতো সহজলভ্য নয়। সেই অভাবই কৃষিসহায়ক যন্ত্রের ব্যবহারে বাধ্য করছে। পাশাপাশি কম সময়ে ও কম খরচে চাষে কৃষি সহায়ক যন্ত্রের যে গুরুত্ব রয়েছে, চাষিদের তা বোঝাচ্ছে কৃষি দফতর। সব মিলিয়েই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

    এক সময়ে দুই জেলার বড় অংশের বাসিন্দা খেতমজুরের কাজ করতেন। অনেকে পূর্ব দিকের জেলা বর্ধমান, হাওড়া ও হুগলিতে খানকাটা বা আলু বসানোর কাজ করতে যেতেন। গত কয়েক দশকে ছবিটা ক্রমশ বদলাচ্ছে। আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার যুবকদের একাংশ শ্রমিকের কাজে যুক্ত হয়েছেন। জেলার কলকারাখানাতেও অনেকে কাজ পেয়েছেন।বেশি মজুরি পাওয়ায় ভিন্‌ রাজ্যেও পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় খেতখামারে কাজে আগ্রহী শ্রমিক আগের তুলনায় অনেকটা কমে গিয়েছে।

    এই পরিস্থিতিতে সাবেক চাষের পদ্ধতি বাতিল হতে বসেছে। নিতুড়িয়ার গোবাগ গ্রামের চাষি হপনচন্দ্র সরেনের আক্ষেপ, ‘‘বাড়িতে গরু, লাঙল সব রয়েছে। কিন্তু সে সব নিয়ে চাষ করার শ্রমিক পেতে সমস্যা হচ্ছে।’’ রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বাবুগ্রামের চাষি অজন্ত সিংহদেও বলেন, ‘‘চাষের জন্য সব জোগাড় হলেও অনেক সময় চাহিদা মতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু সে কারণে চাষ পিছিয়ে যাচ্ছে।’’

    এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের বন্ধু হয়ে উঠছে কৃষি সহায়ক যন্ত্র। কৃষি আধিকারিকেরা জানান, সুপরিকল্পিত যন্ত্রের ব্যবহারে আর্থিক সাশ্রয় হবে। যেমন, বলদে টানা লাঙলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার ব্যবহার করে চাষির সাশ্রয় হচ্ছে। ধান চারা রোপণে প্রতি বিঘা জমিতে পাঁচ থেকে ছ’জন শ্রমিক লাগে। সেই কাজই করে দিচ্ছে একটি ‘প্যাডি ট্রান্সপ্লানটার’ বা ধানরোপণ যন্ত্র। ‘ভেজিটেবল ট্রান্সপ্লাটার’ দিয়ে একই ভাবে আনাজের চারা রোপণকরা যায়।

    কাস্তে দিয়ে প্রতি একরে জমির ধান কাটতে যে পরিমাণ শ্রমিক ও অর্থের ব্যয় হয়, তার প্রায় অর্ধেক খরচে ‘সেল্ফ প্রপেলড রিপার’ বা ধান কাটার যন্ত্রে সহজে ফসল কেটে ফেলা সম্ভব। এছাড়াও ‘মিনি কম্বাইন হারভেস্টার’ ব্যবহারে অর্ধেক খরচে ধান কাটা-ঝাড়া ও বাছাই সম্ভব।

    চাষে পর্যাপ্ত জলের জোগান নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তা বরাবরের। কৃষি আধিকারিকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ন্যূনতম জল নিয়ন্ত্রিত ও পর্যাপ্ত ব্যবহার করেও চাষ সম্ভব। এক্ষেত্রে ‘স্প্রিং কলার’ বা ফোয়ারা সেচ ও ‘ড্রিপ ইরিগেশন’ বা বিন্দু সেচের সরঞ্জাম ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এতে পুরুলিয়ায় আনাজ ও ফল চাষে সাফল্য এসেছে বলে দাবি।

    চাষিদের কৃষি সহায়ক যন্ত্রপাতি কেনার ব্যাপারে সহায়তা করতে বিভিন্ন প্রকল্পও রয়েছে। রাজ্য সরকারের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে (ফার্ম মেক্যানাইজ়েশন স্কিম) কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে চাষিরা একক ভাবে ও দলগত বা গোষ্ঠী তৈরি করে আবেদন করতে পারেন।কৃষি দফতর সম্মতি দিলে কৃষকেরা যন্ত্র কিনেতার রসিদ জমা দিলে ভর্তুকি পাবেন। রাজ্যের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প ছাড়াও রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পেও চাষিদের কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে সহায়তা করা হয়।

    কৃষি দফতরের পর্যবেক্ষণ, বিগত কয়েক দশকে কৃষি ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে।চাষিরাও এই সব যন্ত্র পেয়ে অনেক উপকৃত হচ্ছেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)