• কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
    আনন্দবাজার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সহযোগিতার প্রশ্নে কেন্দ্র-রাজ্যের চাপানউতোর নতুন নয়। এসআইআর আবহে রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠছে নির্বাচন কমিশনের দিক থেকেও। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিবেশ বজায় না রাখার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও বরাবর সরব থেকেছে রাজ্য সরকার তথা শাসকদল। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিগত বেশ কয়েক বছরে কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কে যে টানাপড়েন চলছে, তাতে আসন্ন ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও রাজ্যের তরফেই অসহযোগিতার অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার গত ১৪ বছরে সরকারি কাজের ‘রিপোর্ট কার্ড’ প্রকাশের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, এসআইআরের আতঙ্কে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার।

    মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনেক যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা থাকা সত্ত্বেও, কেন্দ্রকে বলব—অনেক ধন্যবাদ টাকা আটকে রাখার জন্য। যতই অত্যাচার-অপপ্রচার-কুৎসা-চক্রান্ত করুন, আমরা আপনাদের থেকে সহযোগিতা চাই। অসহযোগিতা চাই না। আশা করি এটুকু আপনারা শুনতে পাচ্ছেন। এটা রাজনৈতিক বৈঠক নয়, সরকারি। দুই সরকারের মধ্যে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্য-কেন্দ্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। শুধু ঝগড়া করা নয়।’’ মালদহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘‘বাংলাদেশের নাগরিকের কাছে জব কার্ড, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা গিয়েছে। সীমান্তে কাঁটাতার দিতে দেওয়া হয়নি। আয়ুষ্মান ভারত, বিশ্বকর্মা যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা ৩ চালু করতে চাননি। প্রধানমন্ত্রী দিতে চান। আপনি দিতে দেননি।’’

    সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নির্বাচন এলেই সংস্থাগুলি দিয়ে ধরপাকড়, সক্রিয়তা দেখানো হয়। ফের একই চিত্রনাট্য হতে পারে আঁচ করেই কি মুখ্যমন্ত্রী সহযোগিতার কথা বলছেন? কাল পর্যন্ত যিনি ছিলেন রণংদেহী, আজ তাঁর মনোভাব চলো পায়ে ধরি।’’

    ঘটনাচক্রে, কিছুদিন আগে কেন্দ্রের সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে কার্যত মান্যতা দিয়ে সেই সব সম্পত্তির তথ্য কেন্দ্রের ওই পোর্টালে আপলোড করার নির্দেশ সব জেলাশাসককে দিয়েছে নবান্ন। অথচ সেই আইন এ রাজ্যে কার্যকর হবে না বলে একসময় হুঁশিয়ারি দিয়েছিল শাসকদল। রাজ্য সরকারের এই অবস্থান নিয়ে তীব্র জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তা আরও উস্কে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যও।

    প্রসঙ্গত, তৃণমূল এবং সরকারের বিরুদ্ধে তোষণের রাজনীতির অভিযোগও বরাবর তুলে এসেছেন বিরোধীরা। এ নিয়ে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন বিরোধী নেতারা। অবশ্য এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘আমি কমিউনাল রাজনীতি করি না, সেকুলার রাজনীতি করি। সংবিধান মানি। সর্বধর্মের সব মানুষকে সম্মান করি। এখানে সকলের নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা রয়েছে। বিরোধিতা যাঁরা করেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ। যাঁরা ভালবাসেন তাঁদেরও কৃতজ্ঞতা।’’

    বিভিন্ন রাজ্য থেকে এ রাজ্যের বাসিন্দাদের এনআরসি সংক্রান্ত নোটিস পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের মনোভাব নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তাঁর ঘোষণা, এসআইআরের কারণে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে এবং হাসপাতালে যাঁরা ভর্তি তাঁদের এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘এখানে ডিটেনশন ক্যাম্প করে দুর্ভোগ তৈরি করতে দিই না। অন্য রাজ্যের ব্যাপারে যেমন হস্তক্ষেপ করি না, তেমনই কেন্দ্রের কিছু বলার থাকলে রাজ্য সরকারকে বলবেন। ব্রিটিশ শাসকদের মতো এমন কিছু হুলিয়া বা নির্দেশ দেবেন না, যাতে মানুষের ক্ষতি হয়।’’ শুভেন্দুর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বিএলও-দের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। কারণ, ভুয়ো ভোটার রেখে দেওয়ার জন্য বিএলওদের উপর চাপ দিয়েছেন বিডিও এবং তৃণমূল নেতারা।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)