• অনিয়মের জেরে সম্পর্কের দফারফা
    আনন্দবাজার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • তমলুকের একটি বুথে সর্বশেষ ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে বিজয় নায়েকের। তবে এসআইআরের ফর্ম পূরণে তিনি ‘মা’ হিসাবে যাঁর নাম লিখেছেন, তা ভুয়ো বলে মহকুমা প্রশাসনে অভিযোগ জানাল বিজেপি। বিজয় অবৈধ ভোটার বলেওদাবি তাদের।

    শুধু জেলা সদর নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের নানা প্রান্তে এমন একাধিক গরমিল নিয়েই সরব বিজেপি। যেমন ভগবানপুরে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য রবীনচন্দ্র মণ্ডলের নাম একাধিক জায়গায় থাকা নিয়েও প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। বিজেপির তমলুক বিধানসভার বিএলএ-১ মধুসূদন প্রামাণিক সোমবার মহকুমাশাসকের কাছে বিজয়ের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানান। মধুসূদনের দাবি, ‘‘ওই বুথের তৃণমূল নেতা জবরদস্তি বিজয়ের নাম এসআইআরেনথিভুক্ত করিয়েছেন।’’

    তমলুক বিধানসভার নকিবসান গ্রামের ২০৯ নম্বর বুথে ভোটার তালিকায় ২১০ ক্রমিক নম্বরে নাম রয়েছে বিজয় নায়েকের। পিতার নাম অভিরাম নায়েক। আর মায়ের নাম তমাল নায়েক। মহিলার নাম কী করে তমাল হল, প্রশ্ন উঠেছে। ভোটার তালিকায় ২০৬ নম্বরে নাম রয়েছে বিজয়ের স্ত্রী বৈশাখী নায়েকের। বৈশাখীর পিতার নাম ভগবান নায়েক। এনুমারেশন ফর্মে বিজয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় উত্তর চব্বিশ পরগণার টিটাগড় বিধানসভার ১৩৭ নম্বর বুথের ৫৩ নম্বরে ভগবান নায়েক (৪০ বছর ) অর্থাৎ বিজয়ের শ্বশুরের। ভগবানের পিতার নাম শ্যাম নায়েক। ৫৪ নম্বরে র‍য়েছেন তমাল নায়েক। কিন্তু তমালের পিতার নাম লেখা রয়েছে ভগবান নায়েক! অর্থাৎ বিজয়ের মামাবাড়ির দাদু এবং শ্বশুরের নাম একই!

    বিজয়ের অবশ্য দাবি, ‘‘তমাল আমার মা। বিজেপির অভিযোগ ঠিক নয়।’’ সংশ্লিষ্ট বুথের তৃণমূল নেতা (বিএলএ-২) কার্তিক পাল বলেন, ‘‘বিজয়ের ছোটবেলায় বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বিজয়কে নিয়ে মা এক ব্যক্তির কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাবার সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে না । তাই মায়ের নামের লিঙ্কে ফর্ম পূরণ করেছে। সম্পর্কে কে কী হবে, আমি কী করে বলব! তবে বিজয়ের নাম ১৪-১৫ বছর ধরে ভোটার তালিকায় রয়েছে।’’

    আবার ভগবানপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য রবীনচন্দ্র মণ্ডলের নাম একাধিক জায়গায় ভোটার তালিকায় রয়েছে। ভগবানপুর-১ ব্লকের তেঠিবাড়ি বুথে (অংশ নম্বর-৬৩, ক্রমিক নম্বর-২৩) ভোটার তিনি। খেজুরি বিধানসভার পশ্চিম চক উত্তর এবং দক্ষিণ বর্মন ও ভুঁইয়াপাড়া বুথেও ৫১৩ নম্বরে তাঁর নাম রয়েছে। খেজুরি-১ বিডিও-র কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। রবীনের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

    খেজুরিতেই স্বামী এবং স্ত্রী বাবার নাম ভোটার তালিকায় এক হয়ে গিয়েছে! শেখ শাহলম এবং তাঁর স্ত্রী খেজুরি বিধানসভার ৯৮ নম্বর বুথের কন্ঠিবাড়ির ভোটার। বিজেপির অভিযোগ, শাহলম বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। স্থানীয় আজাদ শেখের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। পরে আজাদকে বাবা সাজিয়ে আধার কার্ড এবং সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র বানিয়েছেন। এনুমারেশন ফর্ম পেয়েছেন আজাদের মেয়ে এবং জামাই দু’জনেই। দু’টি ফর্মেইআজাদ ‘বাবা’!

    খেজুরির বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিকের অভিযোগ, ‘‘শাহলমের ফর্ম আপলোডে বিএলও-কে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা প্রচণ্ড চাপ দিয়েছিলেন। বিডিও-কে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’’ বিজেপির কাঁথি জেলা সহ সভাপতি তাপস দোলুইয়ের মতে, ‘‘তৃণমূল কেন এসআইআরের বিরোধিতা করছে, তা এতেই স্পষ্ট।’’ খেজুরি ১-এর বিডিও শুভাশিস ঘোষ বলেন, "যে সব অভিযোগ এসেছে, তার প্রেক্ষিকে প্রমাণ দিতে অভিযুক্তদের শুনানিতে ডাকা হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)