নির্বাচন এলেই ভোটার তালিকায় ‘ভূতের উপদ্রব’ নিয়ে সরব হয় বিরোধীরা। এখন বিযয়টি নিয়ে বিরোধীরা যতটা সুর চড়াচ্ছে, বাম আমলে তার থেকেও বেশি সরব হতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূলকে। এ বার ভোটার তালিকায় ভূত খোঁজার কাজে রাজনৈতিক দলগুলিকে জড়িয়ে নিতে চাইছে নির্বাচন কমিশন।
রাজ্য সরকারের ‘সমব্যথী’ প্রকল্পের পোর্টাল, ব্যাঙ্ক-ডাকঘর-বিমা সংস্থার থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে বুথ লেভেল অফিসার-দের (বিএলও) রিপোর্ট মিলিয়ে মৃতদের নামের তালিকা তৈরি করেছে জেলা নির্বাচনী দফতর। এক দম বুথ ধরে ধরে সেই তালিকা প্রধান আটটি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে নির্বাচনী দফতর। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ ও নির্বাচন) অমিয় দাস ওই তালিকা পাঠিয়ে সেগুলি খুঁটিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন রাজনৈতিক দলগুলিকে। তালিকার বাইরে আর কেউ মৃত থাকলে সংশ্লিষ্ট বিধানসভার ইআরও কিংবা জেলা নির্বাচনী দফতরে বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে। আজ, বুধবার জেলায় আসছেন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সংক্রান্ত কাজের মূল পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত ও জেলার পর্যবেক্ষক স্মিতা পাণ্ডে।
জেলা নির্বাচন আধিকারিক তথা জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, “প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।” কমিশনের নির্দেশে বিভিন্ন সূত্র ধরে মৃতদের নামের তালিকা তৈরি করেছে জেলা নির্বাচনী দফতর। তেমনই, ভোটার-ম্যাপিং করে, বিএলও-দের রিপোর্ট দেখে, স্থানীয় সূত্র ধরে অনুপস্থিত, স্থানান্তরিত একাধিক জায়গার তালিকায় নাম থাকা ভোটারদের শনাক্ত করে তালিকা তৈরি করেছে নির্বাচনী দফতর।
রাজনৈতিক দলগুলির কাছে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী, জেলায় ১৬টি বিধানসভায় ৪৫০৬টি (কাঁকসার একাংশ-সহ) বুথ রয়েছে। মৃত ভোটারের সংখ্যা ৯৫,৭০২ জন, যা মোট ভোটারের ২.২৯%। পাকাপাকি ভাবে স্থানান্তরিত হয়েছেন ৬৮,৩৭৭ জন। একাধিক তালিকায় নাম রয়েছে ৫৪৭৭ জনের। খোঁজ মেলেনি ১৮,৪০১ জনের। এ ছাড়া, বিএলও অ্যাপ্লিকেশন-এর তথ্য মোতাবেক, ৬৪১ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কমিশন জানিয়েছে, সমব্যথী প্রকল্প থেকে মৃতদের তালিকা বার করার পাশাপাশি শ্মশান, কবরস্থান, সমাধিস্থল থেকেও মৃতদের নথি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল।
আধিকারিকদের দাবি, ওই সব নথি নেওয়ার পরে পঞ্চায়েত-পুরসভা ও হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট নিয়ে মৃতদের তালিকা মেলানো হয়। সব শেষে ব্যাঙ্ক-ডাকঘর-বিমা সংস্থার থেকে মৃত্যুর কারণে বন্ধ হওয়া অ্যাকাউন্টের তালিকা পেয়েছে জেলা নির্বাচন দফতর। এক আধিকারিকের দাবি, “মাঠে-ময়দানে ঘুরে বিএলও-রা রিপোর্ট দিয়েছেন। গণনাপত্রেও অনেকে মৃত বলে জানিয়েছেন। নিখুঁত তালিকা প্রস্তুত করতে সব জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কোনও কারণে তালিকার বাইরে মৃত, স্থানান্তরিত, অনুপস্থিত বা একাধিক জায়গায় তালিকায় নাম থাকলে তা জানানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
কমিশন জানিয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য— তালিকায় থাকা মৃত, ভিন্ন ঠিকানায় স্থানান্তরিত, অনুপস্থিত ও ভূতুড়ে ভোটারদের খুঁজে বার করা। গণনাপত্র দেওয়ার সময়েই দেখা গিয়েছে, ২০০২-এ সংশোধনীর পরে মৃত্যু হয়েছে, এমন অনেকের নাম থেকে গিয়েছে তালিকায়। এর নেপথ্যে নির্বাচনের কাজে যুক্ত আধিকারিকদের একাংশের সম্মতি থাকার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না। পরিবার ছাড়াও, মৃত্য ভোটারের তথ্য দেওয়ার কথা রাজনৈতিক দলের বুথ লেভেল এজেন্ট-দেরও (বিএলএ)। যদিও বাস্তব বলছে, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে নীরব ছিলেন।
জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের থেকে চিঠি গেলেও শাসক বা বিরোধী, কোনও পক্ষের থেকে ‘সহযোগিতার’ আশ্বাস সে ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি। তৃণমূলের জেলা নেতা বাগবুল ইসলামের বক্তব্য, “শেষ তালিকায় জেলায় ১৮ হাজারের মতো মৃত ভোটারের নাম ছিল। কয়েক মাসের মধ্যে মৃত বেড়ে এক লক্ষে দাঁড়াচ্ছে। কমিশন কতটা অকর্মণ্য তা বোঝা যাচ্ছে।” জেলা বিজেপি নেতা অভিজিৎ তা বলেন, “যা বলার সর্বদলীয় বৈঠকে বলব।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনের প্রতিক্রিয়া, “বৈঠকে বলা হবে। কমিশনকে চিঠিও দেব।”