মেরেকেটে চার থেকে সাড়ে চার ফুটের একটি গলি। তারই ভিতরে তৈরি হচ্ছিল একটি পাঁচতলা বহুতল। সোমবার সকালে নবান্নের কাছেই শরৎ চ্যাটার্জি রোডে ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের চারতলার একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেও চাঙড়ের কিছুটা অংশ ছিটকে আসায় আহত হয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। চাঙড়ের আঘাতে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে তার সাইকেলটি।
এই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, অতি নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ওই সরু গলির মধ্যে পাঁচতলা বাড়িটি তৈরি হচ্ছে। আগামী দিনে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে পুরসভার আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে হাওড়া পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের শরৎ চ্যাটার্জি রোডে সঙ্কীর্ণ গলির মধ্যে ওই পাঁচতলা বহুতলটির নির্মাণকাজ চলছিল। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ কাজ চলার সময়েই বাড়িটির চারতলা থেকে একটি অংশ হুড়মুড় করে নীচের রাস্তায় ভেঙে পড়ে। বিকট শব্দ পেয়ে এলাকার লোকজন বেরিয়ে আসেন।
মোহন সাহা নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বিকট আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে এসে দেখি, চারতলার একটা বড় অংশ রাস্তায় ভেঙে পড়েছে। আর তার নীচে জখম অবস্থায় পড়ে রয়েছে একটি মেয়ে। তার সাইকেলটি পুরো ভেঙে গিয়েছে। আমরাই মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে খবর দিই। মেয়েটির পরিবারের লোকজন তার প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন।’’
এই দৃশ্য দেখার পরে এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই বাড়িটির নির্মাণকর্মীরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে চ্যাটার্জিহাট থানা থেকে পুলিশ এসে রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া অংশ পরিষ্কার করে দায় সারে বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, যে প্রোমোটার ওই বাড়ি তৈরি করছেন, ঘটনার পরে তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। পুলিশও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি।
এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের চারতলার যে অংশ ভেঙে পড়েছে, সেখানে সবুজ কাপড় ঝুলিয়ে জায়গাটি আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। চারতলার উপরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পড়ে রয়েছে কংক্রিটের ভাঙা অংশ। এলাকার বাসিন্দা তরুণ সামন্ত বলেন, ‘‘এই এলাকায় এ ভাবেই অনেক বেআইনি বাড়ি তৈরি হয়েছে। কিন্তু পুরসভার কোনও হেলদোল নেই।’’
এ দিনের এই ঘটনা প্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বাড়িটি বেআইনি ভাবে তৈরি হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখবেন। প্রয়োজনে ওই বাড়িটির প্রোমোটারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
যদিও এ বিষয়ে ওই বহুতলের প্রোমোটার অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন কিছু ঘটেনি। ঘটলে তো থানা-পুলিশ হত। আমি সমস্ত আইন মেনে বাড়িটি করছি। যেখানে জানানোর, জানান।’’