• ডিমের বাজার আগুন, ছেঁকা পড়ুয়া-প্রসূতির
    আনন্দবাজার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • চিকিৎসকেরা যখন পুষ্টির জন্য রোজ ডিম খেতে বলছেন, তখনই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের ডিমের বরাদ্দে পড়ছে কোপ। বাজারে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বহু জায়গায় পড়ুয়াদের অর্ধেক করে ডিম দিতে বাধ্য হচ্ছেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। আট টাকার ডিম যে কেবল মিডডে মিল বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্তৃপক্ষের কপালে ভাঁজ ফেলেছে, তা-ই নয়। সাধারণ মানুষ থেকে হোটেল-রেস্তরাঁ মালিক কিংবা পথের ধারের ফাস্ট ফুড বিক্রেতাদেরও লোকসানের কড়ি গুণতে হচ্ছে।

    মঙ্গলবার খুচরো বাজারে ডিমের দাম ছিল আট টাকা। কোথাও কোথাও তা সাড়ে আট টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে রাজ্যের সরকার-পোষিত স্কুল বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে। কেননা সেখানে পড়ুয়া এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ নির্দিষ্ট থাকে। গত একমাস ধরে ডিমের দামে ওঠানামা চলছে। কিন্তু মাথা পিছু বরাদ্দের থেকে বাজারে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা পরিমাণে কমিয়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় কী— বলছেন সরকারি শিক্ষাকেন্দ্রে রান্নার দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা থেকে রাঁধুনি সকলেই।

    নবদ্বীপের এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা শুক্লা বিশ্বাস জানান, এত দিন নিয়ম ছিল যে পড়ুয়ারা সোম, বুধ, শুক্র গোটা এবং মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি অর্ধেক ডিম পাবে। অন্য দিকে প্রসূতি ও গর্ভবতীরা প্রতি দিনই গোটা ডিম পাবেন। শুক্লার প্রশ্ন, “রোজ যেখানে ডিমের জন্য বরাদ্দ সাড়ে ছয় টাকা, সেখানে দাম আট টাকা হলে বাকি টাকা কে দেবে? ব্যয় সংকলন হচ্ছে না তাই ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন নির্দেশিকা জারি হয়েছে।” তাঁর ওই কেন্দ্রে শিশু এবং মা মিলিয়ে প্রায় ৫০ জন রয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি দিন ৫০টি ডিম পিছু দেড় টাকা করে মোট ৭৫ টাকার ভর্তুকি আসবে কোথা থেকে? উত্তর মেলেনি প্রশ্নের।

    ডিম ব্যবসায়ীদের দাবি, দামের উপর কোনও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই এই অবস্থা। একই ডিম কলকাতা এবং নদিয়ার পাইকারি বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিকোচ্ছে। অথচ এ সব ডিম প্রধানত আসছে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। এমনিতে শীতকালে, বিশেষ করে বড়দিন থেকে ইংরেজি নববর্ষ পর্যন্ত ডিমের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়ে যায় সর্বত্র। জোগানে ঘাটতি দেখা দিলেই চড়া হয় দাম। খুচরো বিক্রেতাদের অভিযোগ, অন্ধ্র থেকে যাঁঁরা ডিম আনেন, তাঁদের কাছ থেকে আরও দু’হাত ঘুরে তা পৌঁছয় সাধারণ ক্রেতার কাছে। এই বড় পাইকারেরা ডিমের দাম বহু ক্ষেত্রে ইচ্ছা মতো বাড়িয়ে দেন। তাতেই বাজার চড়ে যায়। খুচরো বিক্রেতা আশিস দামের আক্ষেপ, “ একই জায়গা থেকে আমদানি করা ডিম আমাদের রাজ্যে ঢুকলেই দর জায়গা বিশেষে ভিন্ন হয়ে যায়। কলকাতার বাজার আর জেলার বাজারে কোনও মিল থাকে না। বিপাকে পড়তে হয় আমাদের মতো বিক্রেতাদের।”

    হোটেল-রেস্তরাঁয় ডিমের চাহিদা ছাড়াও সুষম খাদ্যের তালিকায় প্রথমেই থাকা ডিমের একটা স্থায়ী চাহিদা হাসপাতাল-নার্সিংহোমে সব সময় আছেই। অন্য দিকে ডিম-ভাত কিংবা রুটি সঙ্গে ডিমের ঝোল বা খিচুড়ির সঙ্গে ওমলেটের মত চটজলদি রান্নার বিকল্প হয় না। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় টান পড়ছে গৃহস্থের পকেটেও। ফলে বিক্রিও কমছে বলে জানাচ্ছেন খুচরো বিক্রেতারা। সেই সঙ্গে যোগ হতে চলেছে শীতের পিকনিক।

    জেলায় ডিমের অন্যতম পাইকার নাদু মাঝি বলেন, “অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম আমদানি হয়। আমাদের রাজ্যের মতো অন্যান্য রাজ্যেও এখন চাহিদা তুঙ্গে। তাই এখন দাম কিছুটা বাড়বে।” তবে তাঁর মতে, “রাজ্যে ঢোকার পর ডিমের দাম তুলনায় বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।” এখন অবশ্য রাজ্যেও প্রচুর ডিম উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু খুচরো বা পাইকার উভয়েরই বক্তব্য, অন্ধ্রের পোলট্রির ডিম যদিও বা কিছুটা কমে বিক্রি করা যায়, বাংলার ডিমের দাম সব সময় বেশি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)