• বকেয়া আদায়ে অনীহায় বেড়েছে ঋণের বোঝা
    আনন্দবাজার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • একদিকে পাহাড় প্রমাণ ঋণের বোঝা, অন্য দিকে কর বাবদ বকেয়া কোটি কোটি টাকা। অথচ অর্থাভাবে ধুঁকছে পুরসভা। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রশ্ন উঠেছে, কর বিভাগে এত জন কর্মী রেখে কী লাভ হল?

    বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা কর বছরের পর বছর অনাদায়ী অবস্থায় পড়ে আছে। তার উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের দিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ করানো হলেও তাঁদেরও পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের পুরবোর্ড থাকাকালীন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ পুরসভায় পাওনার টাকা আদায় করাই কঠিন ছিল। এমনই বক্তব্য প্রায় সব ঠিকাদারদের। ফলে প্রশাসক নিয়োগ হতেই বকেয়া পাওনা হাতে পাওয়ার আশায় তাঁরা। তার জন্য তাগাদাও দিতে শুরু করেছেন ঠিকাদাররা। যেখানে পুরকর্মীদের বেতনের টাকার সংস্থান করাটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এই পরিস্থিতিতে ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানোটাই পুর কর্তৃপক্ষের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জের।

    খরচ কমাতে গিয়ে ‘ভুতুড়ে’ কর্মী ছাটাইয়ের রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছে কৃষ্ণনগর পুরসভা। তাতে তারা কিছু টাকা সাশ্রয়ের উপয়া করলেও বিপুল পরিমাণ ঘাটতি সামাল দেওয়ার রাস্তা খুঁজে চলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের বেতন, ঠিকাদারদের পাওনা সামলে শহরের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পরিষেবা সংক্রান্ত কাজ আদৌ শুরু করা যাবে কি না তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়েছে পুরসভার অন্দরে।

    বাড়ি তৈরির নকশার অনুমোদন, মিউটেশনের মতো বিষয়গুলি থেকে পুরসভার খরচের একটা বড় অংশ উঠে আসে। তৃণমূলের পুর প্রতিনিধিদের গোষ্ঠীকোন্দলে দীর্ঘ দিন সে সব বন্ধ ছিল। পাশাপাশি দীর্ঘ দিন ধরে কর আদায়ে পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্পত্তিকর বাবদ প্রায় ২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। সেই সঙ্গে দোকান বাবদ প্রায় ৩৩ লক্ষ ২২ হাজার ও বহুতল বাবদ প্রায় ৮৫ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা কর বাবদ অনাদায়ী। পুরসভার বিভিন্ন মার্কেট কমপ্লেক্সের দোকান ভাড়া বাবদও লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। কেন সেই সব টাকা অনাদায়ী হয়ে পড়ে থাকল, এর কোনও সদুত্তর মেলেনি কর বিভাগের কাছে।

    পুর প্রশাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, “বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। অথচ ওই দফতরের কর্মীসংখ্যা ৮০ জন। তাহলে এতদিন ধরে এতজন কর্মী কী করলেন?” তিনি বলেন, “আমরা এই টাকা দ্রুত আদায়ের উপর জোর দিয়েছি।”

    তবে পুরসভার এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঠিকাদারদের পাওনা বাবদ বিপুল বকেয়া। পাওনা আদায়ে এখনও পর্যন্ত তিনশোর মতো ঠিকাদারের আবেদন জমা পড়েছে। সেই টাকার পরিমাণ কয়েক কোটি ছুঁতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও বছরের পর বছর ধরে ‘গ্র্যাচুইটি’ ববদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পাওনা আছে। একদিকে বেলাগাম খরচ, আর উল্টো দিকে আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষের চরম অনীহা কৃষ্ণনগর পুরসভাকে খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)