তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার বিকেলে বহরমপুরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সে দিনই তৃণমূল পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠি দিলেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি তথা বর্তমানে দলের জেলা পরিষদ সদস্য শাহনাজ বেগম। তিনি জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের সম্পতি বেসরকারি হাতে দেওয়ার চেষ্টা, অযোগ্যদের দরপত্র দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এ সব বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জেলা পরিষদের মেন্টর, কো-মেন্টর নিয়োগ নিয়েও শাহনাজ প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘উনি পাগল হয়ে গিয়েছেন। যার জেরে এ সব বলছেন। তাঁর এ সব কথার কোনও উত্তর দেব না।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কো-মেন্টর তথা জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভানেত্রী শাওনি সিংহরায় বলেছেন, ‘‘সমাজ মাধ্যমে কে কী বললেন, তার উত্তর দেব না।’’
সমাজ মাধ্যমের খোলা চিঠি নিয়ে শাহনাজ বলেন, ‘‘জেলা পরিষদে যে সব ঘটনা ঘটছে তা সমাজ মাধ্যমে লিখেছি। এর আগে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী, দলের নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিন্তু এই অন্যায় কাজ বন্ধ হয়নি। তাই সমাজ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চিঠি।’’
শাহনাজ সমাজ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘জেলা পরিষদের অনিয়ম-বেনিয়ম, কাজে অনগ্রসরতা, বৈঠক না ডাকা এ সব নিয়ে দল এবং প্রশাসনকে বহু বার বলেছি। আপনাকেও লিখিতভাবে বহু বার জানিয়েছি। হয়তো আপনার হাতে সেগুলো পৌঁছয়নি। আপনি জেলায় আসছেন। শুনলাম কয়েকদিন থাকবেন। তাই আপনাকে জানাতে সমাজ মাধ্যম ব্যবহার করা ছাড়া আমার কাছে অন্য কোন উপায় ছিল না।’
তাঁর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত আইন মেনে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে বৈঠক হয় না। বর্তমান অর্থ-বর্ষে মাত্র একটি অর্থ উন্নয়ন স্থায়ী সমিতির সভা হয়েছে এবং একটি সাধারণ সভার বৈঠক হয়েছে। বাকি স্থায়ী সমিতিগুলির অবস্থা আরও করুণ। প্রশ্ন হল অর্থের বৈঠক না করে সাধারণ সভার অনুমোদন ছাড়া কীভাবে জেলা পরিষদ উন্নয়ন করতে পারবে? জেলা পরিষদ থেকে রিপোর্ট চাইলেই পেয়ে যাবেন।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অধীনে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রুগ্ণ দেখিয়ে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে শাহনাজ অভিযোগ তুলেছেন।
তাঁর দাবি, ‘‘এই কলেজে ১৬ মাস শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বেতন পাননি। অভিভাবকেরা ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করার পরেও অব্যবস্থার কারণে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কলেজটির নিজস্ব স্থাবর সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য কম করে ৪০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এই জেলা পরিষদ, কলেজটিকে রুগ্ণ দেখিয়ে কোনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চাইছে। এর ফলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, লাভবান হবেন জেলা পরিষদের মুষ্টিমেয় কর্মকর্তা।’’
জেলা পরিষদের নিজস্ব হাসপাতাল আরএন টেগরের মুর্শিদাবাদে যথেষ্ট নাম ছিল। জেলা পরিষদের অকর্মন্যতার কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে বলে শাহনাজ অভিযোগ তুলেছেন।
তাঁর অভিযোগ, ‘‘সভাধিপতির কাজ হল ফলস ক্রেডেনশিয়াল রয়েছে এমন ঠিকাদারকে কিভাবে কাজ পাইয়ে দেওয়া যায় সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকা এবং সমাজ মাধ্যমে রিল পোস্ট করা।’’ শাহনাজ লিখেছেন, মেন্টর, কো-মেন্টরের কাজ কী? শুধু অনারিয়াম নেব, তেল নেব, গাড়ি নেব দু'চারটে ঠিকাদারি কাউকে পাইয়ে দেবো এ সব? জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল ধ্বংস করে এমন পরামর্শদাতার কি প্রয়োজন আছে?’ কো-মেন্টর শাওনি সিংহরায় ও জেলা পরিষদের অন্য পদাধিকারিকদের কঠোর সমালোচনা করেছেন শাহনাজ।