• ক্লাসে ফিরতে দেরি ‘বিএলও’ শিক্ষকদের, ফাঁপরে বহু স্কুল
    আনন্দবাজার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) এনুমারেশন-পর্ব, অর্থাৎ, ফর্ম দেওয়া ও জমা নেওয়ার মেয়াদ ৪ ডিসেম্বর থেকে বেড়ে ১১ ডিসেম্বর করা হয়েছে। খসড়া তালিকা প্রকাশের মেয়াদও বাড়িয়ে ১৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে। আর এতেই ফের মাথায় হাত সরকারি স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের। তাঁরা আশা করেছিলেন, ৪ ডিসেম্বর এসআইআর-পর্ব চুকে গেলে বিএলও-র কাজে যোগ দেওয়া শিক্ষক এবং করণিকেরা স্কুলে ফিরেআসবেন। প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এ বার শিক্ষক ও করণিকদের যদি স্কুলে ফিরতে ১৬ ডিসেম্বর পেরিয়ে যায়, তা হলে তাঁরা চলতি বছরে পরীক্ষার খাতা দেখে ফল প্রকাশ করবেন কী ভাবে?

    ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অনেক স্কুলেই শিক্ষকের অভাবে পরীক্ষার হলে দু’জনের বদলে এক জন শিক্ষককেই নজরদারির কাজ করতে হচ্ছে। কয়েক জন প্রধান শিক্ষকের মতে, বিএলও-র কাজে চলে যাওয়ায় শিক্ষকদের প্রায় কেউই স্কুলে আসছেন না। যাঁরা আসছেন, তাঁদেরও পরীক্ষার হলে নজরদারি করার মতো সময় নেই। ফলে, স্কুলগুলিতে পরীক্ষার সময়ে নজরদারি চালানোর জন্য শিক্ষকের অভাব হচ্ছে।নারায়ণদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘‘ফর্ম দেওয়া-নেওয়ার কাজ ১১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেলেও বিএলও-রা ১৬ তারিখের পরেই স্কুলে যোগ দেবেন। কারণ, খসড়া তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা স্কুলে আসতে পারবেন না। পরীক্ষা কোনও রকমে নিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তুতাঁদের ফিরতে ১৬ ডিসেম্বর হয়ে গেলে পরীক্ষার খাতা দেখা নিয়ে সমস্যা দেখা দেবে। আমাদের পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক। এক-এক জন শিক্ষককে অনেক বেশি করে খাতা দেখতে হবে। তার পরেও সময় মতো পরীক্ষার ফল বার করা যাবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছি।’’

    শুধু শিক্ষকের অভাবই নয়, বিএলও-র কাজে শিক্ষাকর্মীরা চলে যাওয়ায় স্কুলগুলিতে নানা কাজও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কয়েক জন প্রধান শিক্ষক। যেমন, ঠাকুরপুকুর এলাকার কলাগাছিয়া কৈলাস কামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চিত্রিতা মজুমদার বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে এক জন মাত্র করণিক। তিনিও বিএলও-র কাজে গিয়েছেন। ফলে, তিনি না থাকায় নানা কাজে অসুবিধা হচ্ছে। যেমন, এখন যে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, তার প্রতিটি উত্তরপত্রে স্কুলের স্ট্যাম্প মারতে হয়। ওই করণিকই সেই কাজ করেন। কিন্তু তিনি এখন না থাকায় খাতায় স্ট্যাম্প মারার কাজটাও শিক্ষকদেরই করতে হচ্ছে। অনেক সময়ে পড়ুয়াদেরও সাহায্য নিতে হচ্ছে।’’ চিত্রিতা জানান, শুধু ক্লাসের পরীক্ষাই নয়, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড সংক্রান্ত নানা কাজও শিক্ষাকর্মীরা করেন। সেই কাজটাও কে করবেন, তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে ওই স্কুলে।

    দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকেরা না এলে স্কুলগুলির পড়ুয়াদের সার্বিক মূল্যায়নের হলিস্টিক কার্ড তৈরি করতে অসুবিধা হবে। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসের হলিস্টিক কার্ড তৈরি করেন শ্রেণি শিক্ষকেরা। এ দিকে, কয়েক জন শ্রেণি শিক্ষক বিএলও-র কাজে ব্যস্ত। ১৬ তারিখের পরে শিক্ষকেরা স্কুলে যোগ দিলে ওই ক্লাসগুলির পড়ুয়াদের কী ভাবে হলিস্টিক কার্ড তৈরি হবে, জানি না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)