• কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ, কেতুগ্রামের তাঁত সমবায় আজ শ্মশান
    বর্তমান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: পনেরো বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরের তাঁত সমবায়। তাঁত শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন। এক সময়ে এখানকার তাঁতের শাড়ির কদর ছিল। সে সব সোনালী দিন আজ অতীত। বিশাল কারখানা পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কারখানাগুলি থেকে হাপিশ হচ্ছে যন্ত্রাংশ। বেদখল হচ্ছে জায়গা। ঝোপ জঙ্গলে ভরে গিয়েছে সমবায়ের ভবন, কারখানা। সমবায় পুনুরুজ্জীবিত করার দাবি তুলছেন স্থানীয়রা।

    একটা সময় ভাগীরথীর পাড়ে কাটোয়া, কেতুগ্রাম, পূর্বস্থলীজুড়ে তাঁতের সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এখন তার সিকিভাগও অবশিষ্ট নেই। যেটুকু রয়েছে তাও গুজরাতের শাড়ি শেষ করে দিচ্ছে। তাঁতশিল্পীরা অনেকেই কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। অথচ কেতুগ্রাম-২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের বেনেপাড়াতে রাজ্য সরকার তাঁতশিল্পীদের জন্য যে সমবায় সমিতি গড়ে তুলেছিল, সেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। অভিযোগ, সেটা এখন শ্মশানের চেহারা নিয়েছে।

    রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, বাম আমলেই বহু সমবায়ে তালা পড়েছে। আমাদের সরকার সেগুলি পুনুরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে যেসব সমবায় রয়েছে, তাদের কোটি কোটি টাকা ঋণ মকুব করে তাঁতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার।

    কেতুগ্রাম-২ ব্লকের উদ্ধারণপুরে ১৯৮৫ সালে তাঁতবিহীন তন্তুবায় সমিতিটি গড়ে উঠেছিল। ভাগীরথী পাড়ে বেনেপাড়াতে ওই সমবায়ে যুক্ত হয়েছিলেন ১০৫ জন শ্রমিক। তাঁর মধ্যে ৬৮ জনই পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসা। সেখানে ৬৫টি তাঁতযন্ত্রে মোটা সূতোয় দিনরাত কাপড় বোনা হতো। বহু পরিবারের ওই সমবায়ের উপর নির্ভর করেই সংসার চলত। ছন্দপতন ঘটে ২০০২ সালের ভয়াবহ বন্যায়। তাঁত সমবায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁতযন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। আশেপাশের পরিবারগুলির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল ওই সমবায় ভবন। তারপর ২০১২ সাল পর্যন্ত কোনওমতে চলেছিল। এরপরেই সমবায়ে তালা পড়ে যায়।

    পেশা বদল করতে বাধ্য হন বহু তাঁত শ্রমিক। কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে কেরলে চলে যান। কেউ আবার বিড়ি শ্রমিক হয়ে কোনওমতে রুটিরুজি জোগাড় করছেন। ওই সমবায়ের ম্যানেজার ব্রজগোপাল অধিকারী বলছেন, সমবায় বাঁচানো আর সম্ভব নয়। তন্তুশ্রীর কাছ থেকে আমরা প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা পাই। তাছাড়া শ্রমিকরা পেশা বদল করেছেন। এখন ওই সমবায়ের জায়গাতে যদি সরকার অন্য কোনও প্রকল্প করে, তাহলে এলাকার বাসিন্দারা উপকৃত হয়। আমি নিজে ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সমবায়ের হালহকিকত জানিয়েছিলাম। তারপরেও কোনও সমাধান হয়নি। এখন কঙ্কালসার তাঁতযন্ত্রগুলি দেখলে চোখে জল আসে।

    এখন উদ্ধারণপুরে সমবায়ে গেলেই শ্মশানের চেহারা দেখা যাবে। অফিসের জরুরি কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আবার কয়েক বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা তাঁত সমবায়, কারখানা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ছাপা শাড়ির জন্য কারখানা গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, কোটি কোটি টাকায় তৈরি কারখানা কার গাফিলতিতে বন্ধ হল সেটা তদন্ত করে দেখা উচিত। সমবায়ের অন্যান্য সদস্যরা বলছেন, আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি হ্যান্ডলুমকে পাওয়ারলুমে পরিণত করলে আবার শিল্পীরা চাঙ্গা হবে। তবে তাঁতশিল্পীদের একটা বড় অংশের দাবি, সমবায়গুলির কোটি কোটি টাকা কাদের পকেটে গেল তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।
  • Link to this news (বর্তমান)