দিগন্ত মান্না, কোলাঘাট
পাখির সঙ্গে খাঁচার চেনা সম্পর্কটা তিনি আগেই ভেঙে দিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর সাধের সোনাই ফুড়ুৎ হওয়ায় মনও ভেঙেছিল। শোকে, দুঃখে তিনি ফেসবুকে পোস্টিয়েছিলেন, ‘ওরে সোনাই গেলি কোথায়? ফিরে আয়... ফিরে আয়...।’ লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের বহরে তপন মাইতির ফোনে এল প্রাপ্তি–সংবাদ— বেশ কিছুটা দূরে একটি বাড়িতে মনমরা হয়ে বসে আছে সোনাই! দানা, চানা, লঙ্কা কিছুই মুখে তুলছে না সে। শেষ পর্যন্ত মালিককে দেখে সোনাই বলে উঠল, ‘তপন... তপন।’ পাক্কা দশ দিন পরে সোমবার রাতে তপনের কাঁধে চেপেই ঘরে ফিরল সোনাই।
কোলাঘাটের সাহাপুরের তপন পেশায় ভ্রমণকর্মী। নেশা বলতে পাখি। আহত, অসুস্থ পাখিদের উদ্ধার করে সুস্থ করে তোলেন। তারপরে ছেড়ে দেন খোলা আকাশে। বেশ কয়েক বছর আগে দোতলা বাড়ির ছাদে পাখিদের জন্য একটি উন্মুক্ত ঘরও তৈরি করেছেন তিনি। সেই ঘরটাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে পায়রা, শালিক, টিয়ার ঝাঁক। সকালে তারা উড়ান দেয়। দিনান্তে ফেরে চেনা ঠিকানায়।
বছর আটেক আগে টিয়ার দু’টি অসুস্থ ছানাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তপন। শুশ্রূষায় তারা সেরেও ওঠে। তপন ভেবেছিলেন, পাখি দু’টি বড় হয়ে উড়ে যাবে। কিন্তু যায়নি। সাধ করে ওদের নাম রাখা হয়—সোনু আর সোনাই। কারও পায়ে বেড়ি নেই। খাঁচায় থাকার ঝক্কি নেই। এতগুলো বছরে বেশ কিছু কথাও রপ্ত করে ফেলেছে সোনু–সোনাই। সুর করে তপনের নাম ধরে ডাকে দু’জনেই। দিন কয়েক আগে সোনু ঘরে ফিরলেও সোনাই ফেরেনি। সোনাই–হারা মাইতি পরিবারে খাওয়াদাওয়া শিকেয় ওঠে। কথা বলা বন্ধ করে দেন তপন।
এক বন্ধুর পরামর্শে ফেসবুকে পাখির খোঁজ চেয়ে পোস্ট করেন তপন। রবিবার কোলাঘাটের বাড়বড়িশা গ্রামের একটি বাড়িতে একটি টিয়াকে বসে থাকতে দেখে তপনকে ফোন করেন লোকজন। সাধের সোনাইকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তপন বলছেন, ‘ছোট থেকে সন্তানস্নেহে ওকে বড় করেছি। ও হারিয়ে যাওয়ায় খুব ভেঙে পড়েছিলাম।’
কোলাঘাটের সমাজকর্মী অসীম দাসের কথায়, ‘সোনু ও সোনাইকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। বাড়িতে থাকলেও ওরা মুক্ত বিহঙ্গ। ফেসবুকের দৌলতে সোনাই ফিরে এসেছে। আমরা সবাই খুশি।’ আর তপনের স্ত্রী পারমিতা বলছেন, ‘সোনাইকে হারিয়ে কর্তামশাই তো কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিল। ঘরের পাখি ঘরে ফেরায় ওর মুখেও বোল ফুটেছে!’