এই সময়, পাথরপ্রতিমা: শীতের শুরুতেই সুন্দরবনের লোকালয়ে ফের বাঘের আনাগোনা। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের ঢুলিভাসানি জঙ্গল থেকে নদী সাঁতরে একটি বাঘ বসতি এলাকায় ঢুকে পড়ায় গত রবিবার থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পাথরপ্রতিমার শ্রীধরনগর অঞ্চলের উপেন্দ্রনগর এলাকায়। মাছ ধরতে যাওয়ার সময় স্থানীয় ঠাকুরান নদীর তটে প্রথম বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান মৎস্যজীবীরা। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। রবিবার সারা রাত পালা করে গ্রাম পাহারা দেন এলাকার মানুষ।
সোমবার সকালে খবর দেওয়া রামগঙ্গা রেঞ্জ অফিসে। খবর পেয়ে সোমবার দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পাথরপ্রতিমা থানার পুলিশ–সহ রামগঙ্গা রেঞ্জ ও নলগড়া বিট অফিসের বনকর্মীরা৷ ঠাকুরান নদী তীরবর্তী জঙ্গলের লোকালয়ের দিকে প্রায় ৮ কিমি নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে পায়ের ছাপ ধরে বাঘের গতিবিধির উপরে নজরদারি শুরু করে বনকর্মীরা। ছাগলের টোপ দিয়ে একটি খাঁচা পাতা হয়। বাঘের খোঁজ পেতে ড্রোনও ওড়ানো হয়।
সুন্দরবনের জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। বিশেষ করে শীতের সময় জঙ্গল ছেড়ে কখনও কখনও বাঘেরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বনদপ্তরে এডিএফও (অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ফরেস্ট অফিসার) পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘নদীর তটে বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে৷ সেই পায়ের ছাপ দেখে মনে হয়েছে, স্থানীয় জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে বাঘটি। বাঘটিকে বাগে আনতে ৬০ জনের একটি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ কাজ করেছে। কিন্তু বাঘটি দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করায় একটু সমস্যা হচ্ছে। বাঘটিকে ধরার জন্য ছাগলের টোপ দিয়ে একটি খাঁচা পাতা হয়েছে। রাতে জোয়ার উঠলে জঙ্গলের ভিতরে জল ঢুকবে। তখনই বাঘটি উপর দিকে উঠে আসার চেষ্টা করবে। সেই মতো খাঁচাটিকে বসানো হয়েছে। যদি বাঘ খাঁচাবন্দি না হয়, তখন উল্টোদিকের জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে। গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ ও বনকর্মীরাও রোজ রাত পাহারা দিচ্ছেন।
গ্রামবাসীদের দাবি, বাঘটি নদী পেরিয়ে লোকালয়ের একটি ছোট জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে৷ সেখান থেকে বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছেন গ্রামবাসীরা৷ স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত্রা দাস ‘এই সময়’কে বলেন, ‘সোমবার রাতে জঙ্গলের ভিতর থেকে বাঘের গর্জন শোনা গিয়েছিল। তারপর থেকে আমরা সবাই আতঙ্কে রয়েছি। বাঘটা যে সময় লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে। ভয়ে আমরা বাড়ির বাইরে বেরতে পারছি না।’ গৌরহরি মাইতি বলেন, ‘২০২৩ সালে ঠিক এই সময়ে ওই জঙ্গলে বাঘ ঢুকেছিল। এক বছর পরে আবার এলো। বাড়ির পাশের জঙ্গলে বাঘ এলে মানুষ কতটা আতঙ্কিত হয়, আমরা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। আমাদের সারা দিনের সমস্ত কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। কেউ নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছে না। বাড়ির বাচ্চারাও ঘরবন্দি। বনকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আমরাও লাঠিসোটা নিয়ে গ্রাম পাহারা দিচ্ছি।’
খবর পেয়ে এ দিন সন্ধ্যায় উপেন্দ্রননগরে আসেন পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা। কথা বলেন এডিএফও পার্থ মুখোপাধ্যায়–সহ বন আধিকারিকদের সঙ্গে। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আগে এই এলাকায় একবার বাঘ ঢুকে পড়েছিল। যেহেতু এই জঙ্গলে বন্য শুকর–সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রয়েছে, তাই হয়তো খাবারের খোঁজে উল্টো দিকের জঙ্গল থেকে বাঘ নদী পেরিয়ে লোকালের জঙ্গলে চলে এসেছে। বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটাতে যাতে নাইলনের জালগুলো স্থায়ীভাবে লাগানো থাকে, সেজন্য বনদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘নাইলনের জাল দিয়ে ঘেরা থাকলে মানুষজন কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করেন। বনদপ্তরের কর্মীরা চেষ্টা করছেন বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করার জন্য। একই সঙ্গে পটকা ফাটিয়ে উল্টো দিকের জঙ্গলে বাঘটিকে ফেরত পাঠানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে।’