‘এখানে কারও সম্পত্তিতে হাত দিতে দেব না’ মালদহের গাজোল থেকে গর্জে উঠলেন মমতা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশেষ নিবিড় সংশোধনের আবহে মুখ্যমন্ত্রীর মুর্শিদাবাদ ও মালদহ সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। চব্বিশের লোকসভা ভোটে অধরা ছিল মালদহ। তাই ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে মালদহ ও মুর্শিদাবাদকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে তৃণমূল, মত বিশেষজ্ঞদের। সেই মতো বুধবার মালদহের গাজোল থেকে সাধারণ মানুষকে অভয়বাণী দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এসআইআর, এনআরসি এবং ডিটেনশন ক্যাম্পের মত বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদিন সাধারণ মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। গাজোলের সভা থেকে তিনি বলেন, ‘এই বাংলায় কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না।‘ মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘আমি ভোট চাইতে আসিনি, আপনাদের মনের দুশ্চিন্তার কথা স্মরণ করে পাশে দাঁড়ানোর জন্য এসেছি। ভয় পাবেন না, নিশ্চিন্তে থাকুন, ভীত হবেন না।‘
Advertisement
নাম না করে মোদীকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাবছেন গায়ের জোরে সব কিছু করবেন। জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন। মনে রাখবেন, মানুষই কিন্তু শেষ কথা বলে। মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।‘ এসআইআইর-এর মাধ্যমে বিজেপি বাংলা দখলের চেষ্টা করছে। মালদহের গাজোলের সভা থেকে অভিযোগের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঘোষণা হবে। তাই চালাকি করে তিন মাস আগে এসআইআর চালু করেছে। এটা অমিত শাহ করেছেন। এসআইআর না মানলে সরকার ফেলে দাও।‘
এরপর মমতা আরও সুর চড়িয়ে বলেন, ‘খুব লোভ না বাংলা দখল করার? মনে রেখো, চালাকির দ্বারা কোনও মহৎ কাজ হয় না। যতই চেষ্টা কর বাংলাকে দখল করা যায় না। ওরে হ্যাংলার দল, এসআইআর করে তোমরা নিজেদের কবর খুঁড়েছো।‘ এরপরই বাংলা থেকে বিজেপিকে উৎখাতের ডাক দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন বিজেপিকে ছারপোকার সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘ছারপোকা খাটে থাকে, কামড়ায়, যতক্ষণ না মারছেন, ও কামড়াবে। এদেরকেও রাজনৈতিকভাবে সরিয়ে দিতে হবে। যাতে আর কখনও বাংলার ক্ষতি করতে পারে না।‘
বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ এনে মমতা বলেন, ‘আমি কমিউনাল পলিটিক্স করি না। আমি সেক্যুলার পলিটিক্স করি। সংবিধান মানি। সব ধর্মের সব মানুষকে সম্মান করি। বাংলায় সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। তাই এখানে অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেব না।‘ তৃণমূল এসআইআর বা জনগণনার বিরোধী নয় বলে এদিন স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। একজন নাগরিককে কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। বাংলার বঞ্চনা নিয়েও এদিন ফের সরব হন তিনি। মমতা বলেন, ‘ওরা টাকা আটকে রেখেছে, তবু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাই বাংলার উন্নয়নের কর্মকাণ্ড আটকে দিতে ওরা পরিকল্পিতভাবে এসআইআর এর নামে সব কিছু ভণ্ডুল করতে চাইছে।‘
বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে গিয়ে বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে। বাংলায় কথা বলার জন্য বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে। সেই নিয়েও এদিন সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশায় বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে পুশ ব্যাক করে দিচ্ছে। সোনালি বিবি ভারতীয়। কোন সাহসে গর্ভবতী মহিলাকে বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেন? কোর্টের রায়ে ওকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবুও বাংলায় কথা বলা থামাব না। গলা কেটে দিলেও বাংলাই বেরোবে।’
মালদহ ও মুর্শিদাবাদের দীর্ঘদিনের অন্যতম বড় সমস্যা গঙ্গা ভাঙন। মালদহের গাজোলের সভা থেকে ভাঙন ইস্যুতে কেন্দ্রকে নিশানা করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ভাঙন রোধে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কিছু করেনি, সরাসরি এই অভিযোগ করেছেন তিনি। ভাঙন রোধে রাজ্য সরকার ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে। জোর গলায় সেই কথা বলেছেন তিনি। বহুবার বলার পরও কেন্দ্রের তরফে ফরাক্কায় ড্রেজিং করা হয় না। সেই অভিযোগও সভামঞ্চ থেকে এদিন তুলেছেন মমতা।
সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়েও এদিন বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহের সভায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন। তিনি থাকতে কারও সম্পত্তিতে হাত দিতে দেওয়া হবে না বলে জানান। পাশাপাশি জানান, ওয়াকফ আইন রাজ্য নয়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদী সরকার করেছে। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘ওয়াকফ আইন কেন্দ্র করেছে, আমরা করিনি। ধর্মস্থানে হাত দিতে দেব না। যতদিন আছি মাজার থানে হাত দিতে দেব না। বিজেপির থেকে হিন্দুত্ব শিখব না। জগন্নাথ ধাম আমরা করেছি। দুর্গাঙ্গন আমরা করব।’