অর্ণবাংশু নিয়োগী: কোনও চাকরি বাতিল নয়। ৩২,০০০ চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ (2014 Primary TET Verdict)। প্রাইমারি মামলায় 'ঐতিহাসিক' রায় কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court)। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে (Justice Abhjit Ganguly Single Bench Order) খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ (Division Bench)। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চের স্পষ্ট নির্দেশ, বহাল থাকবে চাকরি (32000 Primary Techers Case)।
৯ বছর পর চাকরি ফেরানো সম্ভব নয়...
২০১৪ প্রাইমারি টেট মামলার (WB 2014 Primary TET Verdict) চূড়ান্ত রায়দান করে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ বলে, পাবলিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা রাখা প্রয়োজন। সিবিআই তদন্তের উঠে এসেছে কতজনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু ৯ বছর পর আর চাকরি ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় (32000 Primary Techers Case)।
ডিভিশন বেঞ্চের স্পষ্ট বক্তব্য, আদালতের উচিত স্বচ্ছতার উপর জোর দেওয়া এবং বৃহৎ আকারের অনিয়ম খুঁজে বের করা। তবে আদালতের উচিত অপ্রমাণিত অভিযোগগুলিও দেখা। সম্পূর্ণ পরীক্ষা বাতিলের জন্য প্রমাণ করতে হবে যে সম্পূর্ণ নিয়োগে দুর্নীতি রয়েছে। অকৃতকার্য প্রার্থীদের একটি দলের কারণে সম্পূর্ণ নিয়োগ বাতিল করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। সিবিআই তদন্ত এখনও বিচারাধীন। সিবিআই দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগের কিছু নাম দিয়েছে।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর প্রশ্ন
প্রসঙ্গত, শুনানি পর্বে কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) ডিভিশন বে়ঞ্চের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বলেন, "একটাই নিয়োগ প্রক্রিয়া। যদি কোনও অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট (Aptittude Test) না হয়ে থাকে তাহলে সেটা প্রশিক্ষিত (Trained) এবং অপ্রশিক্ষিত (Non-trained) কারোর ক্ষেত্রেই হয়নি। তাহলে এখন আদালত কী করবে? এখন যদি আদালত ৩২ হাজার অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীর চাকরি বাতিল (32000 Jobless) করে, তাহলে বাকি প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের কি ছেড়ে দেওয়া হবে? কারণ তারা তো একই নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ।"
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী আরও বলেন,"সেটা কীভাবে সম্ভব হবে? ১ লাখ ২৫ হাজার আবেদনকারী, ৪২ হাজার চাকরিপ্রাপক, এতগুলো পরিবার! এই সময়ের মধ্যে তাঁরা চাকরির ৫ বছর সম্পূর্ণ করেছেন। যদি ২ বছর আরও মামলা চলে তাহলে তাঁরা ৭ বছর সম্পূর্ণ করে ফেলবেন। এর ফলে তাঁরা গ্র্যাচুইটির একটা অংশের জন্যও যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন! এর সমাধান কী?"
চাকরি বাতিল মামলা
প্রসঙ্গত, ২০১৪ প্রাইমারি টেটের ৩২০০০ বাতিল চাকরি মামলার (32000 primary teachers case) চূড়ান্ত রায়দান হল আজ। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) পুনরায় এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা ফেরত পাঠানোর পর দীর্ঘদিন ধরে চলে শুনানি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ (Kolkata High Court) প্রাথমিকে ৩২০০০ চাকরি বাতিল মামলার চূড়ান্ত রায়দান (2014 Primary TET Case Final Verdict) করল। এই রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল সব মহল।
নিয়োগে 'দুর্নীতি'র অভিযোগ
২০২৪-র ৬ মার্চ টেট পরীক্ষা ফর্ম ফিলআপ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন জারি হয়েছিল। প্রায় ১৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী ফর্ম ফিলআপ করেন। এরপর ২০২৫-র ১১ অক্টোবর টেট পরীক্ষা হয়। প্রায় ১৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেন। ২০১৬-র ১৪ সেপ্টেম্বর রেজাল্ট বেরয়। প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার পরীক্ষার্থী সেই প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণ হয়। ২০১৬-র ২৬ সেপ্টেম্বর ৪২,৯৪৯ শূন্যপদে নিয়োগের নোটিফিকেশন জারি হয়। ২০২৬-র অক্টোবর মাসে ধাপে ধাপে ইন্টারভিউ হয়। নিয়োগ শুরু হয় ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে।
বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির রায়
প্রথম ধাপে প্রায় ১১,০০০ প্রশিক্ষিত টেট প্রার্থীর নিয়োগ হয়। এরপর প্রায় ৩২০০০ 'অপ্রশিক্ষিত' প্রার্থীর ধাপে ধাপে নিয়োগ হয়। যেই নিয়োগ নিয়েই দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ, অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়নি। নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ হয়নি। এসএমএস-এ নিয়োগ হয়। কারা নিয়োগ পেল, কারা পেল না, সব অন্ধকারে রাখা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ (Justice Abhijit Ganguly) এই ৩২০০০ অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিলেন।
হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট হয়ে ফের হাইকোর্টে মামলা
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পরবর্তীতে এই মামলা যায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। ডিভিশন বেঞ্চও অভিজিৎ বাবুর রায় বহাল রাখে। এরপর এই মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে চাকরিহারা শিক্ষকরা অভিযোগ করেন যে, তাঁদের কথা না শুনেই তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট পুনরায় এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠায় এবং চাকরিহারা শিক্ষকদের আবেদন শুনতে বলে। সেই থেকে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর এজলাসে এই মামলার দীর্ঘদিন ধরে শুনানি চলে। ১২ নভেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়। তবে রায়দান রিজার্ভ রাখা হয়েছিল। আজ ৩ ডিসেম্বর প্রাথমিকের ৩২০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল মামলার চূড়ান্ত রায়দান হল।