রণয় তিওয়ারি: বাতিল চাকরি কি ফিরে পাবেন ২০১৪ প্রাইমারি টেটের চাকরিহারা ৩২০০০ জন (2014 Primary TET)? উত্তর মিলবে আজই। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) পুনরায় এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা ফেরত পাঠানোর পর দীর্ঘদিন ধরে চলে শুনানি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টে (Kolkata High Court) আজ ৩২০০০ চাকরি বাতিল মামলার চূড়ান্ত রায়দান (2014 Primary TET Case Final Verdict)। কী রায় দেয় হাইকোর্ট? চাকরি বাতিল-ই বহাল থাকবে? নাকি হারানো চাকরি ফিরে পাবেন ৩২০০০ জন (2014 Primary TET 32000 jobless)? রায়ের দিকে তাকিয়ে সবমহল।
একনজরে মামলার গতিপ্রকৃতি (2014 Primary TET Case)
২০২৪-র ৬ মার্চ টেট পরীক্ষা ফর্ম ফিলআপ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন জারি হয়। প্রায় ১৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী ফর্ম ফিলআপ করেন। এরপর ২০২৫-র ১১ অক্টোবর টেট পরীক্ষা হয়। প্রায় ১৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেন। ২০১৬-র ১৪ সেপ্টেম্বর রেজাল্ট বেরয়। প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার পরীক্ষার্থী সেই টেট উত্তীর্ণ হয়। যদিও কত নম্বর পেয়ে পাস করেছেন, সেই কোনও নম্বর জানানো হয়নি। কোনও লিস্টও প্রকাশ করা হয়নি।
এরপর ২০১৬-র ২৬ সেপ্টেম্বর ৪২,৯৪৯ শূন্যপদে নিয়োগের নোটিফিকেশন জারি হয়। ২০২৬-র অক্টোবর মাসে ধাপে ধাপে ইন্টারভিউ হয়। নিয়োগ শুরু হয় ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে। ধাপে ধাপে চলে নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে প্রায় ১১,০০০ প্রশিক্ষিত (Trained) টেট প্রার্থীর নিয়োগ হয়। এরপর প্রায় ৩২০০০ 'অপ্রশিক্ষিত' (Non-trained) প্রার্থীর পরবর্তীতে ধাপে ধাপে নিয়োগ হয়। যেখানে অভিযোগ, নিয়োগের সময় প্যানেল প্রকাশ হয়নি। এসএমএস-এ নিয়োগ হয়। রাতের অন্ধকারে নিয়োগ হয়। কারা নিয়োগ পেল, কারা পেল না, সব অন্ধকারে রাখা হয়। যা নিয়েই মামলার সূত্রপাত।
২০২২-এর সেপ্টেম্বর মাসে ২০১৪ টেটে দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে মামলা ঠোকেন প্রিয়াঙ্কা নস্কর। কোনও অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়নি। অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়াই সেই নম্বর দেওয়া হয়েছে। রুল মেনে প্যানেল তৈরি ও প্রকাশ করা হয়নি। থার্ড পার্টিকে দিয়ে প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল। থার্ড পার্টি এজেন্সি হিসেবে প্যানেল তৈরি করেছিল রয় অ্যান্ড বসু কোম্পানি। যার কোনও সরকারি অনুমোদন ছিল না। রুলস মেনে সিলেকশন কমিটিও তৈরি করা হয়নি। রিজার্ভেশন রুলও ফলো করা হয়নি। হাই মার্কস প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের থেকে লো মার্কস প্রাপ্তরা চাকরি পায়। মূলত এই অভিযোগেই দায়ের হয় মামলা।
এরপর ২০২২-এর ১১ নভেম্বর বোর্ড প্রথম টেট পাসের লিস্ট দেয়। সেখানে টেট উত্তীর্ণরা প্রথম তাঁদের টেটে প্রাপ্ত নম্বর জানতে পারেন। এরপর ২০২২-এরই ২০ নভেম্বর কোর্টের রায়ে বোর্ড প্রথম এই নিয়োগের মেরিট লিস্ট দেয়। মামলার শুনানি চলাকালীন, নিয়োগে যথেচ্ছ দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly) ৩২০০০ চাকরি বাতিল করেন। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই পরবর্তীতে এই মামলা যায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। ডিভিশন বেঞ্চও অভিজিৎ বাবুর রায় বহাল রাখে।
এরপর এই মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে চাকরিহারা শিক্ষকরা অভিযোগ করেন যে, তাঁদের কথা না শুনেই তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট পুনরায় এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠায় এবং চাকরিহারা শিক্ষকদের আবেদন শুনতে বলে। সেই থেকে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর এজলাসে এই মামলার দীর্ঘদিন ধরে শুনানি চলে। ১২ নভেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়। তবে রায়দান রিজার্ভ রাখা হয়। আজ ৩ ডিসেম্বর সেই ৩২০০০ চাকরি বাতিল মামলার চূড়ান্ত রায়দান।