প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বহাল, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ হাই কোর্টে, তবে ‘দুর্নীতি’তে তদন্ত
প্রতিদিন | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
গোবিন্দ রায়: প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি (Primary TET) বাতিল নয়। স্বপদে বহাল রইলেন প্রত্যেকে। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ করে জানাল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মাধ্য়মে চলবে ‘দুর্নীতি’র তদন্ত। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, “দীর্ঘ ৯ বছর পর চাকরি বাতিল করলে পরিবারগুলির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।” স্বাভাবিকভাবেই হাই কোর্টের নির্দেশে স্বস্তিতে ২০১৪ সালের টেটের মাধ্যমে নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকরা।
এজলাস থেকে বেরনোর পর সরকারি আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জানান, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী দুর্নীতির জন্য ৩২ হাজার প্রাথমিক চাকরি বাতিল করা হয়। কর্তৃপক্ষের ভুল কিংবা দুর্নীতির জন্য নিরীহ চাকুরিরতদের চাকরি বাতিল হতে পারে না। যাঁরা সফল হননি, তাঁদের জন্য সব কিছু ড্যামেজ হতে পারে না। এতদিন ধরে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁরা কোনও প্রভাবশালীদের সঙ্গে যুক্ত নন। তাই তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে বলেই জানায় ডিভিশন বেঞ্চ।এদিকে, হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় ঘোষণার পরেই X হ্যান্ডেলে প্রাথমিক শিক্ষকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু লেখেন, “সত্য়ের জয় হল।”
বলে রাখা ভালো, ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় ৪২৫০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল। তাতেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালের মে মাসে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে চাকরি বাতিলের পরও তাঁদের কর্মরত থাকতে বলা হয়। বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিন মাসের মধ্যে রাজ্যকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তাতে যোগ্য ও উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরি বহাল থাকবে। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় পর্ষদ। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতীম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে।
ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, একক বেঞ্চের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি থাকছে। কিন্তু পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। একক বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য ও পর্ষদ। তাদের অভিযোগ, সমস্ত পক্ষের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তারপরই মামলাটি হাই কোর্টে পাঠানো হয়। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ডিভিশন বেঞ্চকে সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে। মামলাটি বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে আসে। গত ১২ নভেম্বর মামলাটির শুনানি শেষ হয়। রায়দান স্থগিত ছিল। বুধবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান করে।