মতুয়াগড় থেকেই বঙ্গের ভোটপ্রচার শুরু প্রধানমন্ত্রীর! বিজেপি সাংসদদের পারফরম্যান্সে ‘অসন্তুষ্ট’ মোদি
প্রতিদিন | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: SIR আবহে মতুয়াগড়ে আগেই সভা-মিছিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের জেরে মতুয়াদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিজেপির প্রতি যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই ছাব্বিশের ভোটে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা করছে বিজেপি। সম্ভবত সেকারণেই মতুয়া গড় থেকে রাজ্যের ভোটপ্রচার শুরু করতে চান মোদি। ২০ ডিসেম্বর রানাঘাটে সভা করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ভোটার তালিকা সংশোধন হলেই রাজ্যে গেরুয়া রাজ শুরু হবে বঙ্গ বিজেপিকে এমন কোনও আশ্বাসবাণী দিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বরং আত্মতুষ্টিতে না ভুগে মাঠে নেমে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে বলে সাফ জানালেন তাঁরা। তবে বাংলায় বিদেশিরা ভোট দিচ্ছে। ভোটার তালিকা সংশোধন হলে বহু নাম বাদ যাবে। তাদের বাদ দেওয়াই লক্ষ্য বলে বাংলার সাংসদদের জানান প্রধানমন্ত্রী। এদিন সংসদে বাংলার সাংসদরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আবার সংসদের অধিবেশন শেষ হতেই বাংলা নিয়ে ঝাপাচ্ছে বিজেপি। ২০ ডিসেম্বর রাজ্যে যাবেন বলে সাংসদদের জানান। আপাতত প্রধানমন্ত্রী সাতটি সভা করবেন বলে ঠিক হয়েছে। অন্যদিকে, এসআইআর নিয়ে নালিশ জানাতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দেখা করেন অমিত শাহ ও জেপি নাড্ডার সঙ্গে। রাতে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে পরবর্তী কৌশল ঠিক করতে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
অনেকদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ চেয়ে অপেক্ষা করছিল টিম বঙ্গ বিজেপি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয় বুধবার দেখা করবেন তিনি। এক বুক আশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কার্যত হতাশ হয়ে ফিরতে হয় সাংসদদের। তিনি যে শুধু বাংলা সম্পর্কে নয়, সাংসদদের সম্পর্কেও যথেষ্ট খোঁজখবর রাখেন তাও বুঝিয়ে দেন। কারণ বৈঠকের শেষ মুহূর্তে সকলের হাতে একটি করে খাম ধরিয়ে দেন। তাতে দলের কাজে সাংসদদের ‘পারফরম্যান্স’ উল্লেখ করা ছিল বলে সূত্রের খবর। বেশিরভাগ সাংসদের ‘পারফরম্যান্সে’ তিনি যে অখুশি রিপোর্ট কার্ডে সেই উল্লেখ করেন বলে জানা গিয়েছে। এক সাংসদ জানান, ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে কোনওরকম ইতিবাচক আশার বাণী শোনাননি মোদি। জানান, কোন ধর্মের কতো মানুষর নাম বাদ যাচ্ছে সেটা তালিকা সংশোধনের বিষয় নয়। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করাই লক্ষ্য। সাংসদ খগেন মুর্মুর শারীরিক অবস্থার খবর নেন এবং সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন বলে জানা গিয়েছে।
এরপরেই শুভেন্দু গুচ্ছ গুচ্ছ কাগজ বগলদাবা করে অমিত শাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের বিরুদ্ধে নালিশ ঠোকেন। জানান, ভোটার তালিকা সংশোধনে ব্যাপক গরমিল হচ্ছে। শাহর কাছে সেই তথ্য প্রমাণও দেন। সব শুনে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে নালিশ জানানোর পরামর্শ দেন শাহ। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা। এরপরেই তড়িঘড়ি কমিশনে ছোটেন শুভেন্দু। কমিশনের তরফে অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, রাতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন শমীক ভট্টাচার্য ও শুভেন্দু। সূত্রের খবর, ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া চলাকালীন এমন কোনও কাজ বা বক্তব্য রাখা যাবে না যাতে নিচুতলার কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লাগে। দলের সর্বস্থরের নেতা-কর্মীদের এই কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন সুনীল বনশল ও ভূপেন্দ্র যাদবরা।