সোনালি বিবিদের অবিলম্বে দেশে ফেরান, কেন্দ্রকে সুপ্রিম তোপ, ‘বাবা ভারতীয় হলে মেয়ে কীভাবে বাংলাদেশি?’
বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: বাংলাদেশি ‘সন্দেহে’ সোনালি বিবি এবং তাঁর পরিবারকে ওপার বাংলায় ‘পুশব্যাক’ ইশ্যুতে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ল মোদি সরকার। সোনালির জন্মদাতা পিতা ভাদু শেখ বীরভূমের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই। তাহলে তাঁর সন্তান সোনালি খাতুন কী করে বাংলাদেশি হয়? এদিন শুনানির পর্যবেক্ষণে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রশ্নের মুখে ফেললেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। কেউ ভারতের নাগরিক কি না, তা যাচাইয়ের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত।
একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অবিলম্বে সন্তানসম্ভবা সোনালি বিবি এবং তাঁর আট বছরের সন্তান সাবিরকে বাংলাদেশে থেকে ফেরাতে হবে। সোনালিকে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় তাঁর বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে বলেই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের তোপের মুখে পড়ে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি নিয়ম প্রক্রিয়া মেনেই সোনালি এবং তাঁর সন্তানকে সম্পূর্ণ মানবিকতার খাতিরে ফিরিয়ে আনা হবে। বাকিদের ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে আলেচনা করে আদালতকে জানানো হবে। আগামী ১২ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে জুন মাসে অন্তঃস্বত্ত্বা সোনালি বিবি সহ কয়েকজনকে দিল্লিতে আটক করে পুলিস। বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ই তাঁদের দিল্লি পুলিস হেনস্তা করছে বলে অভিযোগ ওঠে। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে মোদি সরকার সোনালি বিবি সহ কয়েকজনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেয়। মামলা ওঠে কলকাতা হাইকোর্টে। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিন তারই শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপের মুখে ফেলে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ। গত নম্ভেম্বর মাসে শুনানির সময়ই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছিল, সঠিকভাবে সোনালি বিবিদের কথা না শুনেই কী করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেন? সেই মামলার রেশ ধরেই গত সোমবারই শুনানিতে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ফিরিয়ে আনা যায় কি না, ভেবে দেখুন।
আর এদিন সরাসরি শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু ফেরানোই নয়। সোনালি এবং তাঁর সন্তানকে বীরভূমের বাড়িতে পাঠানোরও ব্যবস্থা করতে হবে। বীরভূমের চিফ মেডিকেল অফিসার সোনালির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার। সোনালি খাতুন এবং সাবিরকে বাংলাদেশ থেকে দিল্লিতেই ফেরত আনার পক্ষে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল। তবে যেহেতু তিনি সন্তানসম্ভবা, তাই দিল্লি নয়। সরাসরি বীরভূমেই পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করেন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল এবং সোনালির বাবা ভাদু শেখের কৌঁসুলি সঞ্জয় হেগড়ে। আদালতও সেই মতো কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে। বাকি আরও যাদের এই মামলায় বাংলাদেশি সন্দেহে পাঠানো হয়েছে, তাদেরও ফিরিয়ে আনার আর্জি জানায় রাজ্য। যা শুনে সলিসিটর জেনারেল বলেন, সম্পূর্ণ মানবিকতার কারণে সোনালি খাতুন এবং তাঁর আট বছরের সন্তানকে আমরা দেশে ফেরাব। তবে সন্দেহের নজরদারি বজায় থাকবে।