• গোয়ার গির্জায় ৪০০ বছরেরও বেশি অক্ষত অবস্থায় সেন্ট ফ্রান্সিসের দেহ
    বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সৌগত গঙ্গোপাধ্যায়, মারগাও: পাঞ্জিম থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্ব। ওল্ড গোয়ার এক ধূসর পথের শেষে সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি চার্চ। পর্তুগিজ স্থাপত্যশৈলীর একচেটিয়া সৌন্দর্য যেন  ঠিকরে বেরচ্ছে। পাশেই প্রাচীন কনভেন্ট, বাসিলিকা অব বোম জেসাস। যা এখন আবার ইউনেস্কোর আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম। কিন্তু চার্চের রাস্তায় লোকে লোকারণ্য। ভিড় ঠেলে এগনো মুশকিল। প্রায় সবার হাতেই মোমবাতি। কনভেন্টের প্রবেশদ্বারের কাছেই পাথরের বিশাল দেওয়াল। সময়ের ধ্বংসাবশেষকে কড়া পাহারায় সে আগলে রেখেছে। প্রধান ফটক দিয়ে ভিতরে পা রাখতেই অদ্ভূত এক প্রশান্তি। সুসজ্জিত ইতিহাস পথনির্দেশ করে যেন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক রূপকথার দিকে। কিন্তু চার্চের সামনে আসতেই বিশাল বড় লাইন হাঁটি হাঁটি পা করে এগচ্ছে। আর তা শেষ হল একটি গ্লাস কেসের সামনে, যার ভিতরে রাখা এক মৃতদেহ! সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের মৃতদেহ! রহস্যময় দৃশ্য যেন নিমেষে স্তব্ধতা ভঙ্গ করে ইতিহাসের পাতা খুলে দিল। মৃতদেহ চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে অক্ষত অবস্থায়! ২৪ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর নোভেনা ও ফেস্ট ছিল। তাই এত মানুষের ঩ভিড়।

    চার্চের ফাদারের সঙ্গে কথা বলতেই বিষয়টি স্পষ্ট হল। মৃতদেহটি প্রখ্যাত ধর্মপ্রচারক সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের। বুধবার যাঁর ৪৭৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হল বাসিলিকা অব বোম জেসাসে। ফাদারের কথায়, ‘সেন্ট ফ্রান্সিস দীর্ঘদিন গোয়ায় খ্রীষ্টধর্মের প্রচার করেন। মানুষের সেবা করেন। কিন্তু ১৫৫২ সালের ৩ ডিসেম্বর ধর্মপ্রচারের জন্য চীনে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে তাঁর দেহ সাংচুয়ান দ্বীপে কবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেন্ট ফ্রান্সিসের কর্মক্ষেত্র ও প্রচারের কেন্দ্র মূলত গোয়া ছিল। অনেকে আবার বলেন, তিনি নাকি তাঁর দেহ গোয়াতে কবর দেওয়ার বাসনার কথা জানিয়ে গিয়েছিলে। তাই কিছুদিন পর তাঁর দেহ সাংচুয়ানের কবর থেকে তোলা হয়। কিন্তু, অবাকভাবে শিষ্যরা দেখেন, সেন্ট ফ্রান্সিসের দেহ একইরকম আছে। তখন অলৌকিক শক্তির আঁচ করেন তাঁরা। পরে মালক্কায় (বর্তমানে মালয়েশিয়া) সেন্ট পল চার্চে তাঁর দেহ কয়েকমাস রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত ১১ ডিসেম্বর ১৫৫৩ সালে দেহ গোয়ায় পাঠানো হয়। যা ২০২৫ সাল অর্থাত্ চারশোরও বেশি বছর পর একইভাবে অক্ষত রয়েছে। সেন্টের এক হাত অবশ্য রোমে রয়েছে।’

    গোয়াবাসীদের বিশ্বাস, এই দেহ শুধু এক ধর্মীয় প্রতীক নয়, অলৌকিক বিস্ময়। প্রতি দশ বছর অন্তর ফ্রান্সিসের মৃত্যুবার্ষিকীর সময় মরদেহ ভক্তদের পরিদর্শনের সময় সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি চার্চে রাখা হয়। তা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকটা ওল্ড গোয়ায় আসেন। ২০২৪ সালের পর এবার ২০৩৪ সালে ফের মরদেহ পরিদর্শনের জন্য সেন্ট ফ্রান্সিস অব চার্চে রাখা হবে। তবে বাসিলিকা অব বোম জেসাসে গেলে মূল চেম্বারে এক বিশেষ ক্যাপসুলে এই অলৌকিক মরদেহ আপনি প্রতিদিনই দেখতে পাবেন। 

    এই চার্চ শুধু একটি স্থাপনা নয়, গোয়ার ইতিহাস, ধর্ম ও সংস্কৃতির সংকলন—যেখানে আধ্ম্যাত্মিকতার সঙ্গে লুকিয়ে রয়েছে এক গভীর রহস্য।
  • Link to this news (বর্তমান)