আজ পুতিনের সফরে একাধিক চুক্তি, ট্রাম্পকে পালটা চাপ নয়াদিল্লির
বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অপারেশন সিন্দুরে চরম সাফল্য দেখিয়েছে। পাকিস্তানের একের পর মিসাইল ও ড্রোন আক্রমণ প্রতিহত করেছে। সুতরাং আজ থেকে শুরু হওয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের অন্যতম এজেন্ডায় আরও এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রাশিয়া থেকে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে চলেছে। এখানেই শেষ নয়। বরং তার সঙ্গে আরও আধুনিক এস-৫০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও আসবে ভবিষ্যতে। সেই চুক্তি নিয়ে আজ নৈশভোজের পর নরেন্দ্র মোদি ও পুতিনের ব্যক্তিগত আলোচনা হবে। পুতিনের সফরে ভারত যে চুক্তিতে দ্রুত স্বাক্ষর করার জন্য উন্মুখ, সেটি হল বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাইটার জেট সুখোই-৫৭ ক্রয়। ভারতের জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসছেন পুতিন। কারণ, নিছক একটি দেশ অন্য দেশকে সামরিক উপকরণ বিক্রয় করে মুনাফা করবে—বিষয়টি এমন নয়। রাশিয়া এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং সুখোই বিক্রয়ের পাশাপাশি প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ উৎপাদনের চুক্তিতেও সবুজ সংকেত দেবে। এজন্য বাছাই করা হবে ভারতের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে। হিন্দুস্তান এরোনটিক্স, ভারত ইলেকট্রনিক্স এবং ভারত ডায়নামিক্স। অর্থাৎ ওই দুই সামরিক উপকরণের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা দ্রুত ডেলিভারির জন্য মস্কোর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে না। এই দুই চুক্তির অন্যতম শর্ত হল একটি বড় অংশের সংযুক্তিকরণ হবে ভারতেই। যা ভারত সরকারের যে কোনও সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক সমঝোতায় অন্যতম লক্ষ্য।
রাশিয়ার সঙ্গে ন্যূনতম বাণিজ্য কিংবা সামরিক মিত্রতায় আবদ্ধ হবে যে রাষ্ট্রগুলি, তাদের উপর এরপর ৩৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হুমকি দিয়েছেন। গত আগস্ট মাস থেকে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। মোদি আমার বন্ধু, মোদি অসাধারণ এক মানুষ—এসব বিবৃতি বারংবার দিলেও ট্রাম্প কিন্তু ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করেননি। শুল্কও কমাননি। সুতরাং ভারত নীরবে মার্কিন চাপের পালটা অবস্থান নিয়ে খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকেই ডেকে এনে আপ্যায়িত করছে। পুতিন ও মোদির বৈঠকের পর আগামী কাল দিল্লির হায়দরাবাদ হাউস থেকে প্রকাশিত হবে যৌথ বিবৃতি। যেখানে স্থান পেতে পারে সামরিক চুক্তি, পরমাণু রিঅ্যাকটর প্রদানের সমঝোতা, সুখোই, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। প্রসঙ্গত ভারতে পুতিন আসার প্রাক্কালে জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তিন রাষ্ট্রদূত রাশিয়াকে আক্রমণ করে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি। ভারত ও রাশিয়া পালটা আক্রমণ করে বলেছে, আমরা কী করব এবং কোন কোন চুক্তি করব, সেটা একান্তভাবেই নিজেদের বিষয়। অন্য রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ঠিক যেমন রাশিয়াও হস্তক্ষেপ করে না মার্কিন সরকারের সঙ্গে ভারতের কী কী চুক্তি হবে ও হচ্ছে।
প্রসঙ্গত ট্রাম্পের রক্তচাপ বাড়িয়ে মঙ্গলবারই রাশিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ ডুমায় অনুমোদিত হয়েছে ভারত ও রাশিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ চুক্তি। ১৮ ফেব্রুয়ারি মস্কোয় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী এবার থেকে ভারত ও রাশিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া কিংবা কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় অথবা কোনও উদ্বার অভিযানে যুদ্ধজাহাজ থেকে যুদ্ধবিমান সবই পরস্পরের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর এই প্রথম পুতিন ভারতে পা রাখছেন। ভারত ট্রাম্পকে পরোক্ষে বার্তা দিল, রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। লক্ষ্যণীয়, ভারতে আসার প্রাক্কালে পুতিন পশ্চিমী দেশগুলিকে হুমকি দিয়েছেন, আপনারা কি যুদ্ধ চান? তাহলে যুদ্ধ হবে! আমরা তৈরি!