• বিএলও স্বামী অসুস্থ, কমিশন কর্তাকে ফোন স্ত্রীর, ‘হাসপাতালে অন্য কেউ নিয়ে যাক, আপনি ফর্ম এন্ট্রি করুন’
    বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: বিএলওদের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলছে রাজ্যজুড়ে। অপর্যাপ্ত চাপ সামলাতে না পেরে অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। এই আবহে উঠে এল আরও এক মারাত্মক অভিযোগ! গুরুতর অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কমিশন-কর্তার সঙ্গে ফোনে কথা হয় স্ত্রীর। অসুস্থ স্বামীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আর্জিও জানান তিনি। বিনিময়ে তাঁকে শুনতে হল, ‘হাসপাতালে অন্য কেউ নিয়ে যাক। আপনি ফর্ম এন্ট্রি করুন!’ এমনটাই অভিযোগ ডোমজুড়ের মাকড়দহ-২ পঞ্চায়েতের রাঘবপুর রাধারানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের স্ত্রী মৌমিতাদেবীর। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন হাওড়ার জেলাশাসক পি দীপাপ্রিয়া। 

    অনির্বাণবাবুর পায়ে রয়েছে সেলুলাইটিসের গুরুতর সমস্যা। কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে তাঁর। এসআইআর শুরু হওয়ার আগেই কমিশনের কাছে অসুস্থতার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন অনির্বাণবাবু। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও তাঁকে বিএলওর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। কয়েকদিন টানা হাঁটাচলার ফলে তাঁর পা ফুলে গিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতে অনির্বাণবাবুকে কাঁকুড়গাছির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবারই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ হন মৌমিতাদেবী। সেখানেই সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা তাঁকেই স্বামীর হয়ে ডেটা এন্ট্রির কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। 

    প্রসঙ্গত, অনির্বাণবাবুকে সলপ-১ পঞ্চায়েতের ৬৩ নম্বর পার্টের বিএলও নিযুক্ত করা হয়েছে। মৌমিতাদেবী বলেন, ‘ফোলা পা নিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ডিউটি করত। রাতে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ডেটা এন্ট্রির কাজও করতে হতো ওকে। ইআরওর কাছে বারবার অসুস্থতার কথা বলেও লাভ হয়নি। মঙ্গলবার ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে কমিশনের তরফে আমাকে জানানো হয়, অনির্বাণবাবুকে অন্য কেউ হাসপাতলে নিয়ে যাক। আমি যেন ডেটা এন্ট্রির কাজটা করে দিই। বাধ্য হয়ে আমার শাশুড়ি ওকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন। আমাকে ওর কাজ করতে হয়েছে।’

    এদিকে, মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে অনির্বাণবাবুর চিকিৎসার খরচ জোটাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। এদিন সকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের অফিসে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৌমিতাদেবী। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা  সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ জানান, অনির্বাণবাবু সহ মাত্র তিনজন শিক্ষকের উপর ওই স্কুলটি নির্ভরশীল। এভাবে চাপের মুখে কাজ করলে শিক্ষকরা স্কুল সামলাবেন কীভাবে? শিক্ষাদপ্তর পরিবারের পাশে রয়েছে।’ হাসপাতালে অনির্বাণবাবুকে দেখতে যান জেলা পরিষদের মেন্টর তথা তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘ওঁর চিকিৎসার দায়ভার দলের। কমিশনে শীঘ্রই এনিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)