• ‘আমরা পাশে থাকি, এবার আপনারাও থাকুন’, শহরের আবাসনের মেগা বৈঠকে মানুষের কাছে আরজি মমতার
    বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শহরের আবাসনগুলির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছিল কলকাতা পুরসভা। বুধবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে আয়োজিত সেই বৈঠকে বিভিন্ন আবাসন কমিটির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই জমায়েতকে উদ্দেশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, ‘আমরা সবসময় আপনাদের পাশে থাকি, এবার আপনারাও থাকুন।’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদে থাকলেও সেখান থেকে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ফোনেই তিনি আবাসন কর্তাদের উদ্দেশে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, শহরের বহুতল আবাসনের বাসিন্দাদের সমস্যা, দাবিদাওয়া পূরণে সক্রিয় তাঁর প্রশাসন। পালটা তিনিও আবাসনের বাসিন্দাদের থেকে সহযোগিতা আশা করেন। বাংলার শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং ‘বহিরাগত দাঙ্গাবাজ’দের হাত থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতে আবাসনের ভোটারদের সাহায্য চান মমতা। 

    এদিন বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে ধরেন ফিরহাদ। বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, আবাসনের প্রতিনিধিদের মমতা বলেছেন, ‘আপনারা আমাদের পাশে থাকুন বা না থাকুন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। এসআইআর হচ্ছে। আপনাদের কোনও সমস্যা হলে আমাদের কাছে আসুন। নির্বাচন কমিশন তো ভোট করে চলে যাবে। কিন্তু আমরা-আপনারা সবাই একসঙ্গে থাকব।’ কলকাতা সহ রাজ্যের শান্তি- সম্প্রীতি রক্ষার প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘সবাইকে শান্তিতে রাখা আমার কাজ। কে কী ধর্ম করবে, সেটা তাঁর নিজস্ব বিষয়। একটি সাম্প্রদায়িক দল বাংলায় আগুন লাগাতে চাইছে। দাঙ্গা করতে চাইছে। আগুন লাগলে সবার ঘরে আগুন লাগবে।’ 

    কলকাতার বহুতল আবাসনের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই অবাঙালি। বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও নতুন নতুন আবাসন মাথা তুলছে। ভিন রাজ্য থেকে এসে অনেকে এ রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় কীভাবে এই মানুষজনের সমস্যায় ছুটে গিয়েছেন, এদিন সেরকম একাধিক উদাহরণ তুলে ধরেন মমতা। বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের মনে আছে, কোভিডে আমরা কীভাবে আপনাদেরকে সার্ভিস দিয়েছি। তখন এরা কেউ আসেনি। বড়বাজারে আগুন লেগেছে। আমি ছুটে গিয়েছি। আপনারা জানেন, আমাদের এখানে গুজরাতের ভাইয়ের মার্ডার হয়েছিল। আমি তাঁর বাড়ি গিয়েছিলাম।’

    বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে শহরের বহুতল আবাসন কমিটির কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বার্তার বিশেষ তাৎপর্য আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে, ইতিপূর্বে বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, এই আবাসনগুলির  সিংহভাগ ভোট বিরোধীদের ঝুলিতে যাচ্ছে। আগামী বিধানসভা ভোটেও সেই ‘ট্রেন্ড’ বজায় থাকলে কোনও কোনও কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের পথে কাঁটা হতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখেই দক্ষ ও কৌশলী জননেত্রী আগামী দিনে তাঁদের ‘সহযোগিতা’ চেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আপনাদের শুভকামনা আমাদের সঙ্গে থাকুক। ববিকে বলব, আপনাদের সমস্ত সমস্যা দ্রুত মেটানোর ব্যবস্থা করুক। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিই, তা করে দেখাই।’

    এদিনের বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার প্রমুখ। সূত্রের খবর, এদিনের আলোচনায় মেয়র আবাসনে ভোটদান কেন্দ্র করা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। সেক্ষেত্রে আবাসনের মহিলা, শিশু সহ বাসিন্দাদের বিস্তর দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। 

    আবাসনের প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে অবশ্য এনিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। একদল মনে করছে, ভোটকেন্দ্র হলে অশান্তি হতে পারে। অন্য পক্ষের দাবি, এতে সুবিধা হবে। এই অবস্থায় শীঘ্রই শহরের বিভিন্ন আবাসনের পরিচালন কমিটি ভোটকেন্দ্র সংক্রান্ত বিষযয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসতে চলেছে। মেয়র অবশ্য এদিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ‘ভোটকেন্দ্র নিয়ে কিছু বলিনি। তবে আবাসনের মধ্যে ভাবনাটা খারাপ। তবে এটা আবাসন কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার।’
  • Link to this news (বর্তমান)