• প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বহাল, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ
    বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ খারিজ করে বুধবার প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বহাল রাখল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ। রায়ে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, উদ্দেশ্যহীন তদন্ত ও তার থেকে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আদালত কখনও চাকরি বাতিলের মতো নির্দেশ দিতে পারে না। ন্যায়বিচারের সময় আদালতকে একটি সীমার মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। আদালত নিজের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী, নতুন নীতি তৈরি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বদল করতে পারে না। সব নিয়োগ বাতিলের জন্য আদালতের সামনে প্রমাণ-সহ একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। এই মামলার তথ্য থেকে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে, বলা যাচ্ছে না।

    এই রায়ে শিক্ষকদের পাশাপাশি স্বভাবতই খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুর্শিদাবাদে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা বিচার পেয়েছেন। কথায় কথায় কোর্টে গিয়ে চাকরি খেয়ে নেওয়া ঠিক নয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘বিচার বিচারের মতো চলবে। বিচারব্যবস্থাকে শ্রদ্ধা করি।’ বিকাশ ভবনে সাংবাদিকদের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘এই রায়ের ফলে হৃত সম্মান অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। মহামান্য আদালতের উপরে সাধারণ মানুষের ভরসা আরও প্রোথিত হল।’ নাম না করে বিজেপি এমপি অভিজিৎ গঙ্গ্যোপাধ্যায়কেও একহাত নেন তিনি। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘যিনি এই নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি পরে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়েছেন। তাঁর রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ছিল কি না, তা সাধারণ মানুষই বিচার করুক।’ সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘এই রায় দুর্ভাগ্যজনক। এতে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে।’ আর এক সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘এই রায়ে যে শিক্ষকরা স্বস্তি পেলেন, তাঁদের বড় অংশই যোগ্য। তবে, দুর্নীতি হয়নি আদালত বলেনি।’

    এই রায় রাজ্য সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে বড় জয় বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি চক্রবর্তী বলেন, ‘৯ বছর চাকরি করার পর যদি কারও চাকরি বাতিল হয়, তাঁদের এবং পরিবারের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাছাড়া চাকরি করার সময় ওই চাকরিপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। কয়েক জনের জন্য গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষতি করা যায় না। আদালত চায়, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকুক। যদি কোথাও ব্যাপক অনিয়ম প্রমাণিত হয় এবং পুরো প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলে মনে হয়, সে ক্ষেত্রে আদালত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি।’ 

    ২০১৪ সালের টেট বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। তার পরের বছর পরীক্ষা। প্রথম পর্যায়ে মোট ৪২,৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, দুর্নীতি করে অপ্রশিক্ষিতদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালে সেই মামলা আসে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। মামলা চলাকালীন তিনি সমান্তরাল তদন্ত চালিয়েছিলেন। এরপর ২০২৩ সালের মে মাসে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের পাশাপাশি নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশই খারিজ হল।
  • Link to this news (বর্তমান)