অক্ষরজ্ঞান নেই, চালের দানায় অবলীলায় নাম আঁকেন রেহান
বর্তমান | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চালের উপর প্রেমিকা কিংবা স্ত্রীর নাম লেখাননি এমন বাঙালি আছেন নাকি? থাকলে ধরে নিতে হবে তাঁর সঙ্গে মহম্মদ রেহানের দেখা হয়নি। হলে ভালোবাসার চালবাজিতে পিছিয়ে পড়তেন না তিনি।
রেহান আঠারো বছরের সদ্য তরুণ। থাকেন মেটিয়াবুরুজে। টেবিল-চেয়ার পেতে রোজ এসে বসেন এলিয়ট পার্কের সামনে। টেবিলে ছড়ানো থাকে আঁকার উপকরণ। এই যুবক জীবনে স্কুলের চৌকাঠ পেরননি। পড়াশোনা শেখেননি। অক্ষরজ্ঞান মোটেও নেই। তবুও শক্ত শক্ত বানানের নাম অবলীলায় কি করে যে লিখে ফেলেন, তা এক রহস্য। তাঁকে নামটি কাগজে লিখে দিতে হয়। সেটি একটি ইমেজ হিসেবে চোখে ভাসে তাঁর। তারপর ক্ষুদ্র চালের দানার উপর হুবহু সেটি অনুকরণ করে এঁকে দেন। কাজটি সহজ নয়, রেহান জানেন। তবে নিজের পেটের ভাত জোগাড় করতে শিখতে হয়েছে। শিখেও নিয়েছেন কুশলী শিল্পীর মতো। গোটা গোটা সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা দেখলে কে বলবে যে, স্কুলেই যাননি রেহান! নাম লেখার পর চালটিকে একটি কাচের পাইপের মধ্যে ভরে দেন। পাইপে একধরনের তরল থাকে। তার মধ্যে ভাসতে থাকে নাম লেখা চাল। তরলটি কি বললেন না। সেটি অনলাইনে অর্ডার দিয়ে দাদা আনান, এইটুকুই জানালেন। নাম লেখা চাল ভরা পাইপ দিয়ে চাবির রিং বা গলার হার তৈরি করে দেন। ১০০ টাকার মতো দাম পড়ে। এলিয়ট পার্ক চত্বরে অনেক বিদেশি পর্যটক আসেন। তাঁরাও রেহানের কাছ থেকে নাম লিখিয়ে নিয়ে যান। কলকাতায় আসার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিদেশিরা নিয়ে যান ভারতের চাল।
রেহানদের বড় সংসার। বাড়িতে উপার্জনকারীর সংখ্যা কম। তাই ছোটবেলা থেকেই কাজ করতে হয়েছে। জানালেন, ছোটবেলা থেকে শাড়ির ব্লক প্রিন্টের কাজ করতেন। রোজগার বাড়াতে দাদার থেকে চালের উপর নাম লেখা শেখেন। তারপর টেবিল পেতে লেগে পড়েন এই কাজে। তাঁর টেবিলটি ইন্টারেস্টিং। রাতে সেটি উল্টো দিকের ফুটপাতে রেখে তালা দিয়ে দেন রেহান। বৃষ্টিবাদলার দিনে পড়েন বিপদে। বিক্রি লাটে ওঠে। শীতকাল হল সুখের সময়। এখন ভিক্টোরিয়া-মিউজিয়াম-নিউ মার্কেট-পার্ক স্ট্রিটে ভিড়। লোকজন দেখলে রেহান হাঁকডাক শুরু করেন। ‘চালে নাম লেখা হয়’ বলে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। লোকজন ভিড় করে তাঁর টেবিলে আসেন। তা না হলে বাড়িতে টাকা দেওয়া যাবে না। কাজ ভালো হলে সংসারে টাকার অভাব কমবে। ১৮ বছরের রেহান এই সারসত্য ছোট বয়সেই বুঝে নিয়েছেন। ফলে একমনে মাথা নিচু করে চালে লিখে চলেন একের পর এক অচেনা নাম। রেহানের মাথা নিচু করা আসলে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য।