• মতুয়া-মনের তল পেতে এবার বঙ্গে আসছেন প্রধানমন্ত্রী
    এই সময় | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: ভোটার তালিকায় স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (সার) নিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলায় মতুয়া সমাজে প্রবল উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বার তাই নিজেই বাংলায় আসছেন প্রধা‍নমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০ ডিসেম্বর তিনি মতুয়া অধ্যুষিত নদিয়ার রানাঘাটে জনসভা করবেন। সূত্রের খবর, সেখান থেকেই তিনি ‘সার’ নিয়ে ভরসা জোগাবেন মতুয়া সমাজকে। তবে বঙ্গ–বিজেপির একাংশ চাইছে, রানাঘাটের পাশাপাশি মতুয়া গড় বলে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর ঠাকুরনগরেও একবার অন্তত যান প্রধানমন্ত্রী।

    বাংলায় পা–রাখার আগে মঙ্গলবার তিনি দিল্লিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন এ রাজ্যের বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে বেশ কয়েকজন সাংসদ প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেন ‘সার’ নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে কী রকম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মোদীকে তাঁরা এমনও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে, এখনই মতুয়া সমাজের মন থেকে আতঙ্ক দূর না–করলে ২০২৬–এর বিধানসভা ভোটে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বিজেপি প্রার্থীদের প্রবল সমস্যায় পড়তে হবে। সূত্রের দাবি, এরপরেই প্রধানমন্ত্রী জানান, রানাঘাটে গিয়ে তিনি ওই বিষয়ে যা বলার বলবেন। ‘সার’ নিয়ে বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে উৎকণ্ঠা সম্পর্কে অবশ্য আগেই ওয়াকিবহাল ছিলেন মোদী। তিনি বঙ্গ–বিজেপির প্রচার কৌশলের উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা না–করে বাংলার কোনও মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় সভা করার পরিকল্পনা গত সপ্তাহেই সেরে ফেলেছিলেন।

    দলীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এখনও পর্যন্ত ‘সার’ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সপক্ষে বঙ্গ–বিজেপি নেতৃত্বের প্রচারে খুব একটা সন্তুষ্ট নন নমো। কী ভাবে এ নিয়ে আরও তেড়েফুঁড়ে নামতে হবে, সেটাও তিনি সাংসদদের জানিয়েছেন মঙ্গলবারের বৈঠকে। সূত্রের দাবি, বুধবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এ দিন সন্ধ্যায় একান্তে বৈঠক করেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই বৈঠকেও সব থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ‘সার’ ইস্যু।

    বঙ্গ–রাজনীতি আপাতত সরগরম ভোটার তালিকা ঝাড়াই–বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে। নির্বাচন কমিশনের এই প্রক্রিয়া থেকে কোন রাজনৈতিক দলের কতটা লাভ হবে, তা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে যুযুধান সব পক্ষই ‘সার’কে সামনে রেখে নিজেদের পালে হাওয়া টানার চেষ্টা করছে। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের অভিযোগ, ‘সার’–আতঙ্কে বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বাংলায়। কয়েকজন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) কাজের চাপ সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ। এই অভিযোগগুলিকে হাতিয়ার করেই বিজেপির উপরে দ্রুত চাপ বাড়াচ্ছে জোড়াফুল। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মা‍নুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘সার’–এর পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পরামর্শ এ দিন বাংলার বিজেপি সাংসদদের দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘সার’–এর সমর্থনে প্রচার আরও জোরা‍লো করার পরামর্শ দিয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য, সুকান্ত মজুমদারদের।

    দলীয় সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে মোদী স্পষ্ট ভাষায় এ রাজ্যের বিজেপি সাংসদদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘সার’–এর উপযোগিতা সম্পর্কে যতটা প্রচার দরকার ছিল বাংলায়, তা হয়নি। আগামী দিনে সেই খামতি কী ভাবে পূরণ করা যায়, মূলত তার উপরেই বৈঠকে জোর দিয়েছেন নমো। তবে কোনও সন্দেহ নেই, গেরুয়া শিবিরকে সব থেকে বেশি চিন্তায় ফে‍লেছে মতুয়াদের আতঙ্ক। সেই কারণেই বাংলার অন্য কোথাও নয়, আগামী ২০ তারিখ প্রধানমন্ত্রী জনসভা করতে চলেছেন মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাটেই।

    ‘সার’ ইস্যু ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা আরও বেশি করে প্রচার করার পরামর্শও এ দিন বঙ্গ–বিজেপিকে দিয়েছেন মোদী। সূত্রের খবর, বৈঠকে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রের যে প্রকল্পগুলির সুবিধা বাংলার জনগণ পাচ্ছেন না, তার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করে প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি বুথ লেভেল সংগঠনে আরও বেশি জোর দেওয়ার কথাও বলেছেন নমো। মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মুর উপরে হামলা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী এ দি‍‍ন উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।

  • Link to this news (এই সময়)