• ২৬ বছর পরে নিখোঁজ ছেলেকে ফেরাল ‘SIR’
    এই সময় | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, হাবরা: ২৬ বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পরে অবশেষে ছেলেকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিল 'সার' (স্পেশাল ইনটেনসিভরিভিশন)। হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বাবা-মা। ছেলে এবং নাতির সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলার পরে দীর্ঘ বছর ধরে বুকের মধ্যে জমে থাকা পাথরটা যেন নিমেষে সরে গেল। সেই আনন্দে বাড়িতে সবাইকে মিষ্টিমুখও করানো হলো। হাবরার হাটথুবা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন প্রশান্ত দত্ত এবং তাঁর স্ত্রী শান্তনা। তাঁদের একমাত্র ছেলে তরুণ এক সময় ব্যবসা করতেন। কিন্তু ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় মহাজনদের টাকা ফেরত দিতে পারছিলেন না। টাকা দেওয়ার ভয়ে লুকিয়ে থাকতেন।

    লজ্জায় সে কথা বাবা-মাকে কখনও বলতে পারতেন না। তাই একরূপ বাধ্য হয়েই বাবা-মাকে না জানিয়ে আজ থেকে ২৬ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন তরুণ। ছেলের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন প্রশান্ত এবং তাঁর স্ত্রী। কিন্তু তাতে কোনও লাভহয়নি। এ দিকে ছেলেও বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। বাবা-মাকে অন্ধকারে রেখে পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন করে সংসার পেতেছেন। প্রশান্ত এবং তাঁর স্ত্রী একপ্রকার ধরেই নিয়েছিলেন, ছেলে হয়তো আর কোনও দিনই বাড়ি ফিরে আসবে না। অথবা, কোন দিন জানতে পারবেন, ছেলে আর বেঁচে নেই। কিন্তু সার-এর সৌজন্যে নাটকীয় ভাবে হারানো ছেলের খোঁজ পেলেন প্রশান্ত এবং তাঁর স্ত্রী।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবরার ২৫৯ নম্বর বুথের বিএলও-এর দায়িত্বে আছেন তপন ধর। তিনিও জানতেন, প্রশান্ত দত্তের ছেলে যে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন, সেটা তিনিও বিলক্ষণ জানতেন। তিনি প্রশান্ত দত্তের বাড়িতে গিয়ে তিনটি এনিউমারেশন ফর্ম দিয়ে এসেছিলেন। ছেলের কিছু তথ্য বাড়িতে ছিল। সেই তথ্য নিয়েই তিনটি ফর্ম পুরণ করে প্রশান্ত জমা দেন বিএলও-এর কাছে। বিএলও কমিশনের পোর্টালে ডিজিটাইজেশন করতে গিয়ে দেখেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বিএলও তরুণ দত্তের ফর্ম আপলোড করেছেন। এরপরেই দুই বিএলও কথা বলে নিশ্চিত হন প্রশান্ত দত্তের ছেলেই তরুণ দত্ত। এরপরে বিএলও তপন ধর প্রশান্ত দত্তের বাড়িতে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানান। ছবি দেখার পরে বাবা-মাও নিশ্চিত হন। পরে ছেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়। ছেলে এবং নাতির সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেন বৃদ্ধ বাবা-মা।

    প্রশান্ত দত্তের কথায়, '২৬ বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পরে আমার হারানো ছেলেকে ফিরিয়ে দিল সার। এত বছর পরে ছেলের খোঁজ পাওয়ায় খুব ভালো লাগছে।' মা শান্তনা বলেন, 'ধরেই নিয়েছিলাম, ছেলেকে আর ফিরে পাব না। ছেলে ও নাতির সঙ্গে কথা বলে এত বছর পরে বুকের পাথরটা সরল।' হাবরার ২৫৯ নম্বর বুথের বি এল ও তপন ধর বলেন, 'প্রশান্ত দত্তের ছেলের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা জানতাম। তাই আপলোড করতে গিয়েই নিখোঁজ ছেলের খোঁজ মিলল। বাবা-মায়ের সঙ্গে নিখোঁজ ছেলের যোগাযোগ করে দিতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগছে।'

  • Link to this news (এই সময়)