আজকাল ওয়েবডেস্ক: খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় জেলবন্দি পাঁচজনের চারজনই। জেলবন্দির আগে চেষ্টা চালিয়েছিল খাস কলকাতাকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে। সেই নাশকতার ছক আগেই বানচাল হয়েছিল, এবার জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি'র পাঁচ জঙ্গিকে দোষী সাব্যস্ত করা হল, দেওয়া হল সাজা, যাবজ্জীবন। প্রায় এক দশক পরে, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র গ্রেপ্তার হওয়া ছ’জনের মধ্যে পাঁচজনকে দোষী সাব্যস্ত করলেন সিটি সেশনস কোর্টের NDPS-এর বিশেষ বিচারক রোহন সিনহা। নগর দায়রা আদালতের বিচারক রোহন সিনহার এজলাসে মঙ্গলবার শুনানি শেষে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যাবজ্জীবন সাজার কথা সামনে এল, বুধবার।
দোষী সাব্যস্ত হওয়া জঙ্গিরা হল—
আনোয়ার হোসেন ফরুক, মো. রুবেল, মাওলানা ইউসুফ, মো. শহিদুল ইসলাম, জাবিরুল ইসলাম। আব্দুল কালাম নামে এক অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করেছেন বিচারক। ওই অভিযুক্ত খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সঙ্গেও যুক্ত
ঘটনার সূত্রপাত এক দশকের বেশি সময় আগে। সেই সময়, STF আগে থেকেই গোপন সূত্রে জানতে পারে, জেএমবি-র বেশ কিছু ‘ডেডিকেটেড ও কমিটেড’ জঙ্গি বাংলাদেশ থেকে বেআইনি উপায়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য—ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ 'চিকেন নেক', দক্ষিণ ভারতের রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানো।
তথ্য অনুযায়ী, জেএমবি পরিকল্পনা করেছিল ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। তাদের বিশ্বাস ছিল, বাংলাদেশে শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার পথে ভারতই প্রধান বাধা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও কাশ্মীর ইস্যুতে কথিত “নির্যাতনের প্রতিশোধ” নেওয়ার পরিকল্পনাও তাদের ছিল।
STF-এর প্রযুক্তিগত নজরদারি ও জাল নথি উদ্ধার
লালবাজার পুলিশ সূত্রে খবর, STF-এর আধিকারিকরা শারীরিক ও প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে জানতে পারেন—জঙ্গিরা উত্তর ২৪ পরগণার সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা তাদের সহযোগীদের অর্থাৎ 'স্লিপার সেল'দের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। তদন্তে আরও জানা যায়, তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও ভুয়ো ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেশে কার্যকলাপ চালাচ্ছিল।
বহুজেলা অভিযানে ছ' জঙ্গি গ্রেপ্তার-
ক্রমাগত নজরদারির পর বনগাঁ, বসিরহাট, কোচবিহার ও অসমের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ছ'জন অভিযুক্ত জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ, প্রায় এক দশক আগেই। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়—
বিস্ফোরক ও আইইডি তৈরির উপকরণ
ভারতের ভিতরে বিস্ফোরণের পরিকল্পনার নথিপত্র
সংগঠনের কাঠামো-সংক্রান্ত ডকুমেন্ট
নগদ অর্থ
ল্যাপটপ ও এসডি কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল প্রমাণ
প্রায় ন'বছরের দীর্ঘ ট্রায়াল, অসংখ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ, ডিজিটাল বিশ্লেষণ ও সীমান্তপারের তথ্যের উপর নির্ভর করে আদালত শেষমেশ সিদ্ধান্তে উপনীত হন এবং ওই পাঁচজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ষড়যন্ত্র সহ একাধিক ধারায় চার্জশিট পেশ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।